দীর্ঘ ৩৭ বছর পর স্ত্রী-কে চর্মচক্ষে দেখে তত ক্ষণে গলা ধরে এসেছে উমাপদের।
‘‘তুই, শাঁখাটো এখনও রাখলি বউ!’’
হাতে শাখা। কপালে সিঁদুর। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর স্ত্রী-কে চর্মচক্ষে দেখে তত ক্ষণে গলা ধরে এসেছে। অস্ফুট স্বরে ওই মুহূর্তে শুধু এটুকুই বলতে পারলেন উমাপদ বাউরি। এত বছর ধরে বিচ্ছেদের বেদনায় কান্না চেপে রাখতে পারলেন না স্ত্রী ভবানী দেবীও।
উমাপদ আর দুই মেয়ের মুখ হয়তো তাঁর স্পষ্ট মনে নেই। কিন্তু এই মিলনের আনন্দ সারা শরীরে অনুভব করলেন ভবানীও। রবিবার এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালির মানুষ। সৌজন্যে ‘হ্যাম রেডিয়ো’।
৩৭ বছর আগের ঘটনা। কোনও এক বিকেলে হাটে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার কুমারদাগার বাসিন্দা ভবানী। সেই সময় অনেক খোঁজখবর করেও মেলেনি সন্ধান। ওই ঘটনার ১৫ বছর পর স্ত্রী-র মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে পেয়েছিলেন উমাপদ। ঘরে দুই কন্যা সন্তান। মূলত তাঁদের কথা ভেবেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি।
আর এই এতগুলো বছর ধরে পথেঘাটেই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ভবানী। ঘুরতে ঘুরতে শেষমেশ তাঁর ঠাঁই হয় বকখালির সমুদ্র সৈকতের কাছে বানেশ্বর নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ীর বাড়িতে। বানেশ্বরের বাড়িতেই এত দিন ছিলেন ভবানী।
সম্প্রতি এক পর্যটকের দৌলতেই ভবানীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পৌঁছয় হ্যাম রেডিয়ো স্টেশনে। হ্যাম রেডিয়োর সদস্য ও সুন্দরবন জেলা পুলিশ ধীরে ধীরে ভবানীর পরিচয় জানতে পারেন। যোগাযোগ করা হয় তাঁর পরিবারের সঙ্গে।
কিন্তু স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় শুরুতে ভবানীকে ঘরে ফেরাতে রাজি হচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা। পরে বাউরি সম্প্রদায়ের মুখিয়া ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে রাজি করানো হয়। রবিবার উমাপদ ও প্রতিবেশীরা ভবানীকে নিয়ে যেতে সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি অফিসে আসেন।
হ্যাম রেডিয়োর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রথমে ওই মহিলার প্রতিবেশীরা তাঁকে ফিরিয়ে নিতে চাইছিলেন না। পরে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় তাঁদেরকে রাজি করানো হয়।’’ এ বিষয়ে সুন্দরবন পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘মহিলাকে বাড়ি ফেরাতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই কাজে হ্যাম রেডিয়ো ও বোকারো প্রশাসন অনেক সহযোগিতা করেছে।’’