অসচেতন: করোনা বিধি কার্যত উধাও হাবড়ায়। মাস্ক ছাড়াই বেরচ্ছেন অনেকে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
পুরসভা এলাকার মানুষের একাংশের মধ্যে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা চোখে পড়ছে। এবার তাই দুটি ডোজ় নিতে মানুষকে আগ্রহী করতে পদক্ষেপ করল হাবড়া পুরসভা। পরিবারের সকলের দুটি ডোজ় নেওয়া হলে কর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।
পুর কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হলে পুরবাসী সকলের টিকার দুটি ডোজ় নেওয়া জরুরি। কিন্তু একাংশের মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় নিতে চাইছেন না। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এলাকায় প্রথম ডোজ় দেওয়ার কাজ ১০০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। ওই টিকা পেয়েছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ৮০ শতাংশ মানুষ। ২০ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় নিতে চাইছেন না।
পুরসভার মুখ্য পুরপ্রশাসক নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘যে পরিবারের সকল সদস্যদের করোনার টিকার দুটি ডোজ় নেওয়া থাকবে, সেই সব পরিবারকে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসের পুরকরের উপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ডোজ় না নেওয়া নাগরিকদের উৎসাহ দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর ১৫ জানুয়ারি শহরে করোনায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল ১৯২ জনে। সংক্রমণ কমাতে বাজার-হাট বন্ধ রাখা হয়েছিল। মাস্ক ছাড়া পথে বের হলে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রচার কর্মসূচির মাধ্যমে আবেদন করেছে পুলিশ এবং পুর প্রশাসন। মাস্ক ছাড়া পথে বের হওয়া মানুষদের উপর নজরদারি চালাতে শহর জুড়ে নতুন করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ সবের ফল মিলিছে। পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘সোমবার পর্যন্ত শহরে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমে হয়েছে ১৫ জন। একজন প্রাক্তন পুরপ্রধান-সহ এবার মারা গিয়েছেন ৩ জন। আমরা চাইছি টিকাকরণের কাজ দ্রুত শেষ করতে।’’
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৫-১৮ বছর বয়সিদের প্রথম ডোজ় দেওয়ার কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘১৫-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের কোভ্যাকসিন টিকাকরণের কাজ দ্রুত চলছে। ২৮ দিন পর থেকে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হবে। পথ শিশুদেরও টিকাকরণ করা হবে ভবিষ্যতে।’’
যদিও এতকিছুর পরেও কিছু মানুষের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। অনেকেই বাজারে মাস্ক না পরে ঘুরছেন। দূর থেকে পুলিশ দেখলে মাস্ক পরে নিচ্ছেন। জমায়েত করে আড্ডা, গল্পগুজব করছেন কেউ কেউ। বাজারে ক্রেতা, বিক্রেতাদের অনেকে মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছেন।
বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে ১-৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গিয়েছেন ২০০ জন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে (১-৩১ ডিসেম্বর) করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৪ জন।
দৈনিক সংক্রমণ অবশ্য কমেছে। এ বছর ৯ ডিসেম্বর জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল ৫ হাজার ৫৩ জনে। রবিবার করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৭৩ জনে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের থাবায় এবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকছে বয়স্ক ও অন্যান্য অসুখে ভোগা রোগীদের। তৃতীয় ঢেউয়ে এঁদেরই মৃত্যু বেশি হচ্ছে। রাজ্যে অধিকাংশ সংক্রমণের প্রধান প্রজাতি হিসাবে ওমিক্রনকে চিহ্নিত করা হলেও এ রাজ্যে এখনও ডেল্টা প্রজাতি সক্রিয় রয়েছে বলে সর্তক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানুষকে আরও কিছুদিন সতর্ক থাকতেই হবে। স্বাস্থ্য বিধি বজায় রেখে চলতে হবে।