মদন মিত্র। ফাইল চিত্র।
কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পার করেই বি টি রোড থেকে বাঁ দিকে ঢুকে গিয়েছে সোজা রাস্তা। সেই গ্রাহাম রোড ধরে এগোলে, রাস্তার দু’পাশের দেওয়ালে নতুন রঙের কোনও পোঁচ নেই। শাসকদলের কোনও প্রার্থীর প্রচারে নেই কোনও দেওয়াল লিখন। রাস্তায় ঝুলছে না কোনও ব্যানারও। এই চিত্র ওই রাস্তার ডান অথবা বাঁ পাশের গলি, এমনকি তস্য গলিরও!
প্রশ্ন উঠেছে, ১০৭টি পুরসভায় যে ভোট হচ্ছে, তার থেকে কি বাদ রয়েছে কামারহাটির এই অঞ্চল? শাসকদলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরেই কামারহাটির এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ডে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। ওই সাত ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের দাবিতে এলাকার যানবাহন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একাংশ। সোমবারও বি টি রোডে অবরোধ হয়। যদিও ক্ষোভ এখন প্রশমিত বলেই দাবি স্থানীয় নেতৃত্বের।কিন্তু এক দিন পরে, অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি যেখানে মনোনয়ন পেশের শেষ দিন, সেখানে সাতটি ওয়ার্ডের একটিতেও শাসকদলের দেওয়াল লিখন নেই কেন? ছ’নম্বরের প্রার্থী শামা পরভিনের কথায়, “প্রার্থী নিয়ে ঝামেলা চলছিল। বিধায়কও জানিয়েছিলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা চলছে। তাই নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দেওয়াল লিখতে বারণ করা হয়েছিল।” রবিবার এক সভায় দেওয়াল না লেখার কথা বলেছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র।
যদিও দেওয়াল লিখতে তিনি বারণ করেননি বলেই সোমবার বিকেলে দাবি করেন মদন। তাঁর কথায়, “শীর্ষ নেতৃত্ব যদি কামারহাটির ছোটখাটো নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তা হলে এ সব ঝামেলা হত না। ওই সাতটি ওয়ার্ডে এমন কিছু মানুষ প্রার্থী হয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে পাড়ার লোক, এমনকি বাড়ির সদস্যেরাও নেই। তাই দেওয়াল লেখাও হয়নি।” এ দিন চার নম্বর ওয়ার্ডের ওল্ড লাইন, পাঁচ নম্বরের ইন্ডিয়া আজাদ ক্লাব, পাঁচ ও সাত নম্বরের ধোবিয়া বাগান, ছ’নম্বরের রোজ়ান বাগান, তিন নম্বরের নীলকান্ত অধিকারী রোড এবং এক নম্বরের ঠাকুরদাস রোড ঘুরে মালুমই হল না ভোটের তাপ-উত্তাপ।
এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা পুরসভার প্রাক্তন উপ-প্রধান তুষার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ঠিকই। কিন্তু যে কর্মীরা মনে দুঃখ পেয়েছেন, তাঁদের কথাও শীর্ষ নেতৃত্ব ভাববেন বলে আশা করি। তাই এত দিন দেওয়াল লেখা হয়নি।” যদিও অন্যান্য ওয়ার্ডে ইতিউতি চোখে পড়েছে শাসকদলের প্রচার। এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী যে প্রার্থী তালিকা দিয়েছেন, সেটাই চূড়ান্ত। এর পরে মদন বলেন, “দলের বাইরে এক পা-ও যাব না। দলের চূড়ান্ত প্রার্থীদের জন্য আমাকে এ বার নামতে হবে। কিন্তু যে মুরুব্বিরা এ সব লোকজনকে প্রার্থী করলেন, সেই জনপ্রিয় নেতারা এখন আসছেন না কেন?”
শাসকদলের প্রচারের এমন চিত্র কি কামারহাটিতে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বকেই সামনে নিয়ে আসছে? অনেকেই টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উঠে আসছে অন্তর্ঘাতের প্রশ্নও। বিধায়ক বলছেন, “আমার সঙ্গে অনেকের ছবি রয়েছে। তা দিয়ে কোনও নির্দল প্রার্থী যদি প্রচার করেন, তা হলে পুলিশে অভিযোগ করব। দলের ঠিক করা প্রার্থীদের জেতাতে হবে। তবে, ২০১৬-র বিধানসভায় অন্তর্ঘাতের জন্য হেরেছিলাম। সেটা মমতার অজানা ছিল। এ বার সেটা ওঁর সামনে এনে প্রমাণ দেব।”