গোবরডাঙা পুরসভায় শুরু সার্ধশতবর্ষ উদযাপন
Gobardanga Municipality

Gobardanga Municipality: দেড়শো বছর পেরিয়ে এখনও অপূর্ণ বহু প্রত্যাশা

এ দিন বাদে খাটুরা থেকে ম্যারাথন শুরু হয়। শহর পরিক্রমা করে পুরভবনের কাছে শেষ হয় দৌড়। বিভিন্ন বয়সের ২০০ জন মহিলা-পুরুষ যোগ দিয়েছিলেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৫৩
Share:

উদ্‌যাপন: মশাল জ্বালিয়ে শুরু হল ম্যারাথন। ছবি: সুজিত দুয়ারি

দু’বছর আগেই গোবরডাঙা পুরসভার বয়স দেড়শো ছুঁয়েছে। ওই সময়ে পুরসভার পক্ষ থেকে পুরসভার সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ২৬ এপ্রিল পুরসভার প্রতিষ্ঠা দিবস। এ দিন থেকে পুরসভার পক্ষ থেকে সার্ধশতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচির শুরু হয়েছে। ম্যারাথন, মশাল দৌড়ের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত, উপ পুরপ্রধান তুষারকান্তি ঘোষ, প্রাক্তন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত, গোরবডাঙা থানার ওসি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকে।

Advertisement

এ দিন বাদে খাটুরা থেকে ম্যারাথন শুরু হয়। শহর পরিক্রমা করে পুরভবনের কাছে শেষ হয় দৌড়। বিভিন্ন বয়সের ২০০ জন মহিলা-পুরুষ যোগ দিয়েছিলেন। ছিল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

পুরপ্রধান বলেন, ‘‘পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সারা বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। গোবরডাঙার ইতিহাস নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

অতীতে কুশদহ বা কুশদ্বীপের অংশ ছিল আজকের গোবরডাঙা শহর। এখানে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের ইতিহাস। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার কয়েকশো বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন এখানকার মানুষ। শহরটিকে ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ নামে চেনেন রাজ্যের মানুষ।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭০ সালের ২৬ এপ্রিল গোবরডাঙা পুরসভা গঠিত হয়। গোবরডাঙা বাজারের কাছে জমিদার সারদাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের জমিতে পুরভবন তৈরি হয়। তখন জনসংখ্যা ছিল ২২০০। ওয়ার্ড ছিল ৪টি। প্রথম চেয়ারম্যান হন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। আটটি মৌজা নিয়ে গোবরডাঙা পুর এলাকা সংগঠিত হয়। সেগুলি হল গোরবডাঙা, গৈপুর, খাঁটুরা, হায়দাদপুর, সাহাপুর, কুঠিপাড়া-রঘুনাথপুর, গন্ধর্বপুর ও বাদে খাঁটুরা।

শ্রীশচন্দ্র ছিলেন খাঁটুরার বাসিন্দা। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহযোগী। কলকাতার সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়ে তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন বিদ্যাসাগরকে।

পরবর্তী সময়ে শ্রীশচন্দ্র সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৫৬ সালে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ আইন সরকারি অনুমোদন লাভ করলে শ্রীশচন্দ্র ওই সময়ের সামাজিক নিয়ম ও প্রচলিত সংস্কারকে উপেক্ষা করে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে বর্ধমানের বাল্যবিধবা কালীমতীকে বিয়ে করেন। এ বিষয়ে তিনি মা সূর্যমণি দেবীর নিষেধও মানেননি। ওটিই ছিল প্রথম বিধবা বিবাহ। পরবর্তী সময়ে তিনি বনগাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন।

কুশদ্বীপের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছিল যমুনা নদী। একদা স্রোতস্বিনী ওই যমুনা আজ অবশ্য নাব্যতা হারিয়ে মজে যেতে যেতে মৃতপ্রায়। এখানকার ইতিহাস ঘেঁটে ও প্রবীণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গোবরডাঙার আদি বাসিন্দাদের বেশিরভাগই এসেছিলেন সপ্তগ্রাম থেকে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাট্য পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোবরডাঙা শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমি গর্বিত। গত কয়েক বছরে এখানে কোনও সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য নেই। মহিলারাও রাতে নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারেন। বাইরের অনেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ মানুষ শান্তিতে বসবাসের জন্য গোবরডাঙায় এসে জমি-বাড়ি কিনছেন।’’

প্রাচীন শহরে রয়েছে অনেক কিছুই। তৈরি হয়েছে থানা, দমকল, আধুনিক টাউন হল, পাকা রাস্তাঘাট। পথেঘাটে আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। শহরবাসী জানাচ্ছেন, সব থেকে বড় পাওনা, শান্তিতে বসবাস করতে পারা। তবে অপ্রাপ্তি কিছু রয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত নয়। একমাত্র হাসপাতালটিতে কয়েক বছর হল রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি আছে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলুক রাজ্য সরকার। সব বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়নি। প্রতি বছর বর্ষার ভারী বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। হয়নি যমুনা নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার। ট্রেন ছাড়া সড়ক পথে শহরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়নি। এখান থেকে সরকারি কোনও বাস পরিষেবা নেই। বেশ কিছু রাস্তা সংকীর্ণ। চওড়া করা প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা, সাংস্কৃতিক কর্মী শঙ্কর নন্দী বলেন, ‘‘শীঘ্রই হাসপাতাল চালু হোক। নিকাশি ব্যবস্থা ভাল হোক। খাল নদী সংস্কার প্রয়োজন। বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হোক।’’

পুরপ্রধান সে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক সমস্যাগুলি সমাধান করাই আমার প্রধান কাজ। সে কাজ শুরু করা হয়েছে।’’

প্রবল গরমে এদিন ম্যারাথনের আয়োজন হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোবরডাঙা পুরসভা দেড়শো বছর পেরোনোয় এবং এই শহরে জন্ম নিতে পেরে আমি গর্বিত, আনন্দিত। পুরসভাটি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি বহন করে চলেছে।’’ তবে স্বাস্থ্য পরিষেবার সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ আছে তাঁর। পাশাপাশি বাপি বলেন, ‘‘শুনেছি, তীব্র দাবদাহের মধ্যে ম্যারাথনের আয়োজন হয়েছে। আরও সকালে এই আয়োজন হলে ভাল হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement