উদ্যোগ: লাগানো হচ্ছে কলের মুখ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
স্কুলে যাতায়াতের পথে ছাত্রীদের নজর পড়ত, রাস্তার পাশে ধারে ট্যাপকল থেকে নাগাড়ে জল পড়ছে। এ ভাবে জল অপচয় হতে দেখে ছাত্রীরা সে কথা শিক্ষিকাদের জানায়। এ ভাবে জল নষ্ট হওয়া বন্ধ করা যায় কিনা, তা নিয়ে কিছু করতেও চায়।
ছাত্রীদের কথার গুরুত্ব বোঝেন গোপালনগর নহাটা সারদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকারা। শুক্রবার ছিল জল সংরক্ষণ দিবস। এ দিন স্কুলের তরফে চারটি ট্যাপকলের স্টপকক কেনা হয়। সেগলি লাগানো হয় কলের মুখে।
এ দিন স্কুলের নবম-একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা এ দিন হাত লাগায় কাজে। সাহারানা খাতুন, রূপলেখা বিশ্বাস, দিপীকা সেনগুপ্তর মতো কয়েকজন ছাত্রীর কথায়, ‘‘দিদিমণিদের সাহায্যে জল নষ্ট বন্ধ করতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।’’
এলাকার মানুষকে এ দিন ছাত্রীরা বুঝিয়েছে, জল নষ্ট করা কেন খারাপ। প্রকৃতির উপরে তার কী কুপ্রভাব পড়তে পারে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল বলেন, ‘‘ছাত্রীরাই জল অপচয়ের খবর আমাদের দিয়েছিল। চারটি কলের মুখ এ দিন স্কুল তহবিলের টাকা থেকে লাগানো হয়েছে। টাকা সামান্যই লেগেছে। কিন্তু কাজটার গুরুত্ব অনেক।’’ ছাত্রীরা জানিয়েছে, বাড়িতেও জল অপচয় বন্ধ করেছে তারা।
বনগাঁ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহর এলাকাতেও ট্যাপকল থেকে জল পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের তা নজরে পড়ে। তারা জল অপচয়ের ছবি তুলে প্রধান শিক্ষিকাকে দিয়েছিল। স্কুল থেকে খবর পেয়ে শুক্রবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে বনগাঁর ১৬টি কলের মুখ লাগানো হয়েছে।
স্কুলগুলির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলগুলি এ ভাবে এগিয়ে এলে পানীয় জল অপচয় বন্ধ করতে আমাদের প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হবে।’’
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জল সংক্ষণ দিবসে মহকুমা জুড়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আলোচনা, পথযাত্রা সচেতনতা শিবির করে মানুষকে জল অপচয় বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে। জল অপচয়ের অন্যতম প্রধান কারণ, ট্যাপকলের মুখ না রাখা। এ দিন মহকুমায় আড়াইশো কলের খারাপ হয়ে যাওয়া মুখ নতুন করে লাগানো হয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে।
অন্য দিকে, বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তেও জল সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করতে পদযাত্রা, অনুষ্ঠান হয়েছে। মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস এ দিন সন্দেশখালি ২ ব্লকের পদযাত্রায় সামিল হন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মতো বসিরহাটের বিভিন্ন ব্লকে জলের অপচয় বন্ধে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানুষকে সচেতন করা হয়েছে।’’
জলের অপচয় রুখতে বারাসতে পদযাত্রা করেছেন নবপল্লি বয়েজ হাইস্কুলের শ’তিনেক ছাত্র ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষক অরিন্দম দে জানান, জল বাঁচানোর পাশাপাশি জলাভূমি বোজানো ও নির্বিচারে গাছ কাটার বিরুদ্ধেও এই পদযাত্রা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তেও এ দিন জলের অপচয় রুখতে পদযাত্রা, আলোচনা সভা হয়েছে।