সাগরযাত্রায় প্রস্তুত মৎস্যজীবীরা। নিজস্ব চিত্র
দু’মাস পর, নদী এবং সমুদ্রে মাছ না-ধরার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সোমবার মাঝরাতে।রাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে সমুদ্রে ইলিশ ধরতে রওনা দিচ্ছে কয়েক হাজার ট্রলার, মৎস্যগন্ধের টানে। সোমবার সর্বত্রই মৎস্যজীবীদের শেষপর্যায়ের প্রস্তুতি নজরে এল। তার পাশাপাশি কড়া নজর রয়েছে করোনা বিধি মানার ক্ষেত্রেও।
প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত নদী এবং সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে৷ ওই নিষেধাজ্ঞা কবে শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন মৎস্যজীবীরা। চালাচ্ছিলেন সাগরযাত্রার প্রস্তুতি। সোমবার মধ্যরাতে শেষ ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ, এ বার ডিঙা ভাসানোর ক্ষণ উপস্থিত। লকডাউন এবং ইয়াসের ধাক্কা কাটিয়ে এ বার জলের রুপোলি শস্যের খোঁজে বঙ্গোপসাগরে পাড়ি দেওয়ার পালা। সঙ্গে এক বুক আশা, ইলিশের রুপোলি রেখা ঝলসে উঠুক জীবনেও। এ বার মরসুমের শুরুতেই হালকা বৃষ্টি হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ ইলিশ উঠতে পারে বলে আশা মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির। সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘প্রতি বছরই মাছ ধরার পর আশানুরূপ ইলিশ না মেলায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আশা করি এ বারে ইলিশের আকাল কিছুটা হলেও মিটবে।’’
রবিবার দিনভর সুন্দরবনের ঘাটগুলিতে পুরোদমে প্রস্তুতি নজরে এসেছে। ভিন্রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই এ বার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে রাজি। ফলে করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এ বার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, রায়দিঘি এবং সাগরদ্বীপের মৎস্যজীবীদের উপর প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি মৎস্যজীবীদের। নিজস্ব চিত্র
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৎস্যজীবীদের স্বাস্থ্যশিবির এবং করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল আগেই। নেগেটিভ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তবে ট্রলারে ওঠার অনুমতি মিলছে সকলের। পাশাপাশি মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির তরফে মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে।
কোনও ট্রলারে ১৫ জনের বেশি মৎস্যজীবী থাকবেন না— নিষেধাজ্ঞা মৎস্য দফতরের। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে গভীর সমুদ্রে যাওয়া প্রতিটি ট্রলারে বিপদ সঙ্কেত প্রেরকযন্ত্র রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট এবং পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রাখতেও বলা হয়েছে। জেলার সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘নতুন করে কোনও বিপদ যাতে না ঘটে সে দিকেও কড়া নজর রাখা হয়েছে।’’