প্রচেষ্টা: সংগ্রহশালার একটি অংশে রাখা প্রত্নবস্তু। নিজস্ব চিত্র
পেশায় তিনি মৎস্যজীবী, তবে নেশায় তিনি সংগ্রাহক। সেই নেশার টানেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাথরপ্রতিমার জি প্লটের গোবর্ধনপুরে নিজের বাড়িতে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন বিশ্বজিৎ সাহু। নাম দিয়েছেন ‘গোবর্ধনপুর সুন্দরবন প্রত্ন সংগ্রহশালা’। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রায় দশ হাজার প্রত্নবস্তু। এই লড়াইয়ে সঙ্গী হিসেবে পাশে পেয়েছেন স্ত্রী সবিতা সাহুকে। তাঁর সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রাচীন ভাস্কর্য, জীবাশ্ম, পাথরের হাতিয়ার, বিভিন্ন মুদ্রা, টেরাকোটার জিনিস, নানা ধরনের মূর্তি-সহ নানা প্রাণীর হাড়, দাঁত, শিং, নখ।
বিশ্বজিৎ জানান, অভাবেব সংসারে পড়াশোনার সুযোগ সে ভাবে হয়নি। ১৪ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন তিনি। পরে মাছ ধরার কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তবে নতুন কিছু জানা ও শেখার আগ্রহ ছিল প্রবল। ১৬ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। সেখানে জাদুঘর ঘুরে দেখে প্রত্নবস্তুর প্রতি উৎসাহ জাগে তাঁর। তারপর থেকেই শুরু হয় সংগ্রহের কাজ। তিনি আরও জানান, মাছ ধরার কাজে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছেন তিনি। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকতে পারে এমন জিনিস চোখে পড়লেই তা সংগ্রহ করে আনতেন। জিনিসের সংখ্যা বাড়ায় নিজের একটি ঘরে সেগুলি সাজিয়ে রাখতে শুরু করেন। এ ভাবেই হড়ে ওঠে তাঁর সংগ্রহশালা। বর্তমানে সংগ্রহশালার রক্ষণাবেক্ষণ করেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী।
তবে তাঁর কাজটা খুব সহজ ছিল না। সংসারে অভাব তো ছিলই। পাশাপাশি, বারবার প্রাকৃতির দুর্যোগ, বন্যায় ভিটেমাটি হারিয়েছেন তাঁরা। তবে প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। জন্মস্থানকে ভালবেসে সাজিয়েছেন সংগ্রহশালা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, জি প্লটের একেবারে শেষপ্রান্ত গোবর্ধনপুর। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই অনুন্নত। মূল ভূখন্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। সেই জায়গায় এই সংগ্রহশালা এলাকাবাসীর কাছে গর্বের বিষয়। অনেকেই তাঁর এই সংগ্রহশালা দেখতে আসেন।
বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘সংগ্রহশালা গড়ে সুন্দরবনের ইতিহাসকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমার উপার্জন সামান্যই। তার মধ্যেও সংসার খরচ রেখে বাকি সবটাই ব্যয় করি সংগ্রহশালার পিছনে।’’ তাঁর আক্ষেপ, স্বীকৃতি-প্রশংসা সবই মিলেছে। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ভারত সরকার পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের স্মারক দিয়ে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সংগ্রহশালার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছেন না তিনি।
এই বিষয়ে পাথরপ্রতিমা ব্লকের বিধায়ক সমীরকুমার জানা বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগে বিশ্বজিতের বাড়িতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রতিনিধি দল এসে সংগ্রহশালা ঘুরে দেখেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রত্নবস্তুগুলি বেশিরভাগ পাল ও সেন আমলের। রাজ্য সরকারের তরফে এগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। সুন্দরবনের পর্যটকদেরও তা ঘুরে দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’