আহত সোনা ঘোষ।
দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হলেন দুই যুবক। অন্য একটি ঘটনা, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মোবাইল ফোন লুটের ঘটনাও ঘটেছে। শনিবার রাতে দত্তপুকুর ও দেগঙ্গায় পৃথক তিনটি ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে
এলাকায়।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দত্তপুকুর থানার কদম্বগাছি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সোনা নাথ ঘোষ ও শুভজিৎ ঘোষ ওরফে রিকি নামে দুই কলেজ ছাত্র। সোনার পাঁজরে গুলি লেগেছে। রিকির গলা ভেদ করে বেরিয়ে গিয়েছে গুলি। দু'জনকেই উদ্ধার করে আনা হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোনাকে পরে আরজি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শুভজিতের চিকিৎসা চলছে বারাসত হাসপাতালেই। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কদম্বগাছির চণ্ডীগড় এলাকায় সোনা বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইলে গেম খেলছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সে সময়ে এক যুবক জোরে সাইকেল চালিয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করতে করতে আসছিলেন। পিছনে একটি বাইকে দু’জন দুষ্কৃতী ধাওয়া করেছিল। হঠাৎই গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। গুলি লাগে সোনার পেট ও পাঁজরের তলায়। দুষ্কৃতীরা বাইক নিয়ে চম্পট দেয়।
হেলমেট থাকায় তাদের চিনতে পারেনি কেউ। যে যুবক সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন, তিনি সোনার বন্ধুদের জানান, তাঁর মোবাইল ছিনতাই করার চেষ্টা করেছিল হামলাকারীরা। পুলিশ যুবকের এই দাবি খতিয়ে দেখছে। ওই যুবকের খোঁজ চলছে।
যেখানে সোনা গুলিবিদ্ধ হন, সেখান থেকে পৌনে ১ কিলোমিটারের মধ্যে সামান্য সময়ের ব্যবধানে ঘটে দ্বিতীয় ঘটনাটি। বছর বাইশের শুভজিৎ ঘোষ হেঁটে দোকানে যাচ্ছিলেন। দুই দুষ্কৃতী বাইকে এসে তাঁর মোবাইল ধরে টানাটানি করতে থাকে। মোবাইল না পেয়ে গুলি চালায়। গলায় গুলি লাগে শুভ্রজিতের। পুলিশের অনুমান, দু’জায়গায় একই দুষ্কৃতী দল হামলা চালিয়েছিল।
সোনার দাদা অসিত ঘোষ বলেন, "আগেও এই এলাকায় মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ তার কোনও সুরাহা করতে পারেনি। আমরা চাই, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।" ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে ওই এলাকায় পুলিশ পিকেটের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হবে।" পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।
দত্তপুকুরের ঘটনার কিছুক্ষণ পরে, রাত পৌনে ১০টা নাগাদ দেগঙ্গা থানার সোহাই এলাকায় বেলিয়াঘাটা-ইছাপুর রোডে ফের গুলি চলে। হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন দুই যুবক। অভিযোগ, দু’টি মোটরবাইকে চার দুষ্কৃতী হেলমেট পরে তাদের পথ আটকায়। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে দু’টি মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয়। রাতেই দেগঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বাসিন্দাদের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ হচ্ছে। তবে পুলিশ কোনও দুষ্কৃতীকে ধরতে পারেনি। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে গুলি, বোমা চলেছিল এই এলাকায়। মারামারি হয়েছে। এখন ছিনতাইকারীদের হাতে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ঘুরছে। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারেরও দাবি উঠেছে! বারাসত জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুলিশ ব্যস্ত ছিল। না হলে এলাকায় চলে নিয়মিত টহল চলে।
অন্য দিকে, দত্তপুকুর থানার কদম্বগাছি এলাকার সর্দারপাড়া এলাকায় রবিবার বিকেলে পাট খেত থেকে উদ্ধার হল তিন ব্যাগ বোমা। পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে। কদম্বগাছি অঞ্চল তৃণমূলের যুব সভাপতি মাহবুর রহমান সর্দার বলেন, "ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য আইএসএফ বোমা জোগাড় করেছিল।"
আইএসএফের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক কুতুবুদ্দিন ফতেহি বলেন, "সামনেই বোর্ড গঠন। প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল চলছে। বোর্ড গঠনের সময়ে ব্যবহারের জন্য তৃণমূল ওই বোমা এনেছে।" পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে।