রাজেশ সাউ
বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করা হল এক দুধ ব্যবসায়ীকে। শনিবার বিকেলে নৈহাটি গৌরীপুর এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম রাজেশ সাউ। বছর পঞ্চাশের রাজেশকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাজেশের পরিবার সন্তোষ যাদব নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সন্তোষ পলাতক। তার খোঁজ চলছে।
সন্তোষ এলাকায় তৃণমূলের নেতা হিসেবে পরিচিত। রাজেশও তৃণমূল সমর্থক। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, সন্তোষ এলাকায় মদের ঠেক চালায়। রাজেশ তার প্রতিবাদ করেছিলেন। তার জেরেই এই ঘটনা। বিজেপি অবশ্য বিষয়টিকে ‘বখড়ার লড়াই’ বলে জানিয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, এটা ব্যক্তিগত গোলমাল। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজেশ গৌরীপুর জুটমিলের শ্রমিক কলোনিতে থাকেন। তাঁর ছেলে ছেলে আকাশ সাউ বলেন, ‘‘বাবা ভাত খেতে বসেছিল। তখন বেলা ৩টে হবে। সন্তোষ ফোন করে বাবাকে ডাকে। বলে, বাবার সঙ্গে তার কিছু কথা আছে। খাওয়া শেষ করে হাতে খইনি নিয়ে বাবা চলে যায়। খানিকক্ষণের মধ্যে গুলির শব্দ শুনি। ছুটে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা পড়ে আছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ রাজেশকে নৈহাটি পুরসভার মাতৃসদন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্সরে-তে দেখা যায়, গুলি পিঠের দিক থেকে ঢুকে পেটের মধ্যে আটকে রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করার চেষ্টা চলছে।
রাজেশের স্ত্রী সারদা দেবী জানান, রাজেশের সঙ্গে মাস দু’য়েক আগে ঝগড়া হয়েছিল সন্তোষের। সে এলাকায় বেআইনি কারবার চালায় বলে অভিযোগ। সারদা বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল ওরা। সে জন্যই ফোন করে ডেকেছিল সন্তোষ। গুলি আওয়াজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একজন এসে খবর দেয়, ওকে গুলি করেছে সন্তোষ। সঙ্গে আর একজন ছিল বলে শুনেছি।’’ সারদা জানান, সন্তোষ তৃণমূল করে। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী কোনও পার্টি করত না। তবে তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল। তবে এটা পার্টির ব্যাপার নয়। মদের ঠেকের প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীর মুখ বন্ধ করতেই তাকে গুলি করা হল।’’
বিজেপির কাউন্সিলর গণেশ দাস বলেন, ‘‘সন্তোষ ওখানে মদ এবং অনলাইন জুয়ার ঠেক চালাত। তার বখরা নিয়ে গোলমাল বাধত মাঝে মধ্যেই। তার জেরেই গুলি চলেছে। এরা বেআইনি কারবার চালায়। যে যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তাকে সমর্থন করে। পুলিশ দেখেও কিছু দেখে না।’’
নৈহাটি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গুলি চলেছে শুনেই আমি পুরসভায় আসি। জখম ব্যক্তিকে মাতৃসদন হাসপাতালে আনা হয়েছিল। গুলি বের করা যায়নি। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। দু’জনেই আমাদের সমর্থক বলে জানি। তবে এর মধ্যে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। নিজেদের গোলমাল বলেই শুনেছি। আমরা খোঁজ-খবর করছি।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (নর্থ) অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘সন্তোষ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। সে পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ সন্তোষ একাই ছিল বলে জানিয়েছেন অজয়। বেআইনি মদের ঠেক চালানো নিয়ে ডিসি বলেন, “আগে চালাত। জানতে পেরে অনেক আগেই পুলিশ তা বন্ধ করে দিয়েছিল। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”