ক্ষতি: এই অবস্থা হয়েছে বরজের। ইনসেটে শ্রীদাম বালা। নিজস্ব চিত্র
আগুনে পুড়ে গেল প্রায় ১৫ বিঘে পানের বরজ। আগুন নেভাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক পান চাষির।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার দাসপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শ্রীদাম বালা (৬২)। স্থানীয় সূত্রের খবর, ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীদাম এ দিন সকালে পানের বরজে থাকা পাট কাঠি থেকে শুকনো আঁশ বা ভেসো ছাড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছিলেন। সে সময়ে অসাবধনতায় বরজে আগুন লেগে যায়। পানের বরজগুলি বাঁশ, পাটকাঠি ও শুকনো খড় দিয়ে ঢাকা থাকে। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দেখতে পেয়ে অন্য খেতে থাকা চাষিরা ছুটে আসেন। আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। শ্রীদামও আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। বনগাঁ থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। প্রধান রাস্তা থেকে খেতের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। দমকলের গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারেনি। বনগাঁ দমকলের স্টেশন অফিসার শম্ভু কুণ্ডু বলেন, ‘‘আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত চলে আসি। কিন্তু রাস্তা থেকে খেত অনেক দূরে হওয়ায় আমরা জলের পাইপ নিয়ে আসতে পারিনি। চাষিদের শ্যালো মেশিন চালিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি।’’
এ দিকে, আগুন নেভানোর কাজ করতে করতেই শ্রীদামের অগ্নিদগ্ধ দেহ দেখতে পান অন্যেরা। স্থানীয় চাষি উত্তম দাস বলেন, ‘‘আমরা এসে বাঁশের খুঁটি-খড় নামিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। শ্রীদামও আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন। নিজের জমিতেও আগুন লাগায় শ্রীদাম সেই দিকে চলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ আমরা খেয়াল করি, শ্রীদাম নেই। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখি, দূরে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়ে আছেন।’’ গোপালনগর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
দাসপাড়া এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই পান চাষ হচ্ছে। চাষিরা কেউ নিজের জমিতেই চাষ করেন। কেউ আবার চাষ করেন জমি ভাগে নিয়ে। চাষিরা জানান, প্রায় ১৫ বিঘে জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। প্রায় কুড়ি জন চাষির কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় চাষি সুশান্ত দত্ত বলেন, ‘‘ভাগে ৮ কাঠা জমি নিয়ে পানের বরজ করেছিলাম। সব পুড়ে গিয়েছে। দেড় লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। ধার করে চাষ করেছিলাম। কী ভাবে টাকা শোধ করব জানি না।’’
শ্রীদামের ছেলে রিপন বলেন, ‘‘বাবা দেড় বিঘে জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এমনটা ঘটতে পারে ভাবতেই পারছি না।’’ চাষিরা জানান, বরজে আগুন লাগার ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে এত বড় ক্ষতি হয়নি। এ দিন ঘটনাস্থলে যান বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। প্রশাসনের কাছে তিনি চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।