আপনজন: পরিবারের সঙ্গে অজয়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গিয়েছিলেন জীবিকার টানে। কিন্তু অশান্ত আফগানিস্তান থেকে প্রাণ হাতে দেশে ফিরে এলেন ওঁরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ কাজে গিয়ে আটকে পড়েছেন আফগানিস্তানে। এঁদেরই পাঁচজন সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে গোলাগুলির শব্দ এখনও তাঁদের কানে বাজছে। বাড়িতে ফিরে পরিবারের লোকজনকে চোখের সামনে দেখে স্বস্তি পাচ্ছেন। আর বিদেশে যেতে চান না তাঁরা। আফগান মুলুকে তো নয়-ই।
এঁদেরই একজন অশোকনগরের বনবনিয়া এলাকার বাসিন্দা অজয় মজুমদার। কাবুল বিমান বন্দরে আমেরিকান সৈন্যদের খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে দাঁড়িয়ে অজয় বললেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম কাবুলে থেকে যাব। কারণ, ওখান থেকে ফিরলে কর্মহীন হয়ে পড়তে হবে। কিন্তু গোলাগুলির আওয়াজ শুনে ভয় লাগতে শুরু করেছিল। এরপরেই দেশে ফিরতে চেষ্টা করি।’’ তাঁর অভিজ্ঞতায়, সাধারণ আফগানরা ভাল মানুষ। অনেকের সঙ্গেই তাঁর বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। সে দেশের বেশির ভাগ মানুষ চান না, দেশটা ফের তালিবানের হাতে যাক।
অজয় বলেন, ‘‘আমেরিকান সেনা আমাদের ওখানে আরও কিছু দিন থেকে যেতে বলেছিল। নিরাপত্তা দেবে বলেছিল। সঙ্গে ৫ হাজার ডলার দেওয়ারও কথা বলে। কিন্তু আমরা কেউ রাজি হইনি। প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম।’’ অজয়রা মনে করছেন, যতক্ষণ না আমেরিকান বাহিনী আফগানিম্তান ছাড়ছে, ততক্ষণ তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করতে লোকজন লাগবে। সে কারণেই তাঁদের টাকা দিয়ে রাখতে চেয়েছিল বাহিনী। কিন্তু সে দেশের এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না অজয়রা।
অজয়ের বাবা তপন বলেন, ‘‘কয়েকদিন আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। খাওয়া-ঘুম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। চাইছিলাম ছেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুক। ছেলেকে আর বাইরে পাঠাতে চাই না। সরকারে কাছে আবেদন, এখানে কর্মসংস্থানের একটা ব্যবস্থা করে দিন।’’
সোমবার রাতেই বাড়ি ফিরেছেন গোপালনগর থানার রামশঙ্করপুর গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিশ্বাস ও পলাশ সরকার। বাড়ি ফিরেছেন গোপালনগরের রাঘবপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর সরকার ও বনগাঁর খরুয়া রাজাপুর এলাকার অভিজিৎ সরকার। সকলেই কাবুল বিমানবন্দর এলাকায় আমেরিকান সৈন্যদের খাবার পরিবেশন করার কাজ করতেন। আফগানিস্তানে তালিবান উত্থানে পরিবারের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। সকলে নিরাপদে ফেরায় পরিবারে স্বস্তি নেমেছে। সকলেই জানিয়েছেন আমেরিকান সৈন্যরা তাঁদের কার্গো বিমানে কাতার পৌঁছে দিয়েছেন। সেখানে কয়েকদিন থেকে দিল্লি কলকাতা হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমেরিকান সৈন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিদ্যুৎ বলেন, ‘‘কাতারে কাতারে মানুষ দেশ ছাড়তে ছুটে আসছিলেন বিমানবন্দরে। চারিদিকে গুলি-গোলার শব্দ। খবর পাচ্ছিলাম, তালিবানরা একের পর এক এলাকা দখল করছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাবুল দখল করে নেয়।’’ পলাশ বলেন, ‘‘সব সময়ে মনে হচ্ছিল, কবে কখন বাড়ি ফিরতে পারব। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের মুখ মনে ভাসছিল।’’