আদর: হাসপাতালে সকলের মাঝে মেঘনাথবাবু। নিজস্ব চিত্র
এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।
অসমে তাঁর বাড়ির সবাই জানত, তিনি মারা গিয়েছেন। হয়ে গিয়েছিল পারলৌকিক কাজ। স্ত্রী বিধবার পোশাক পড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তিনি তো বেঁচে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে। প্রায় সাত মাস পরে পুলিশের মাধ্যমে সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে তাঁর স্ত্রী ও মায়ের কাছে। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি।
তিনি মেঘনাদ মুন্ডা। পুলিশ ও বসিরহাট জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবককে মাস সাতেক আগে মিনাখাঁর রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। সেখান থেকে তাঁকে আনা হয় বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। তার পর চিকিৎসায় আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি।
কিন্তু নিজের নাম এবং ‘অসম’ ও ‘গুয়াহাটি’ এই দু’টি শব্দ ছাড়া কিছুই বলতে পারেননি। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। এর মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ‘ছুটি’ হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু তিনি যাবেন কোথায়? তাই বসিরহাট জেলা হাসপাতাল হয়ে ওঠে তাঁর ঘরবাড়ি। সেখানে নার্স, আয়াদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন মেঘনাদ। এই ভাবেই দিন কাটছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের কর্মী বিশ্বনাথ সেনের সঙ্গে স্থানীয় একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন ওই যুবক। সেখানে তাঁর সঙ্গে স্থানীয় ধলতিথা গ্রামের বাসিন্দা মন্টি মণ্ডলের পরিচয় হয়। মন্টিবাবু সব শুনে ইন্টারনেট থেকে অসমের সব থানার ফোন নম্বর বের করেন। একের পর এক থানায় ফোন করে মেঘনাদের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। তখনই তেজপুর থানা সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে ওই এলাকা থেকে মেঘনাদ মুন্ডা নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে ধরে নিয়ে বাড়ির লোকজন পারলৌকিক কাজও করে নিয়েছে। দুই মেঘনাদ যে এক সেটা বোঝার জন্য ‘নিখোঁজ’ মেঘনাদের স্ত্রী রুপালি এবং মা দুখিনিকে তেজপুর থানায় আনা হয়। করা হয় ভিডিও কনফারেন্স। তখনই নিজের স্ত্রী এবং মাকে চিনতে পারেন বসিরহাটে বসে থাকা মেঘনাদ।
মঙ্গলবার বসিরহাট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকলের মুখে ঘুরছে মেঘনাদ মুন্ডার কথা। হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ সীমা রায় বলেন, ‘‘এক মুখ দাড়ি এবং শরীরে নানা ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ছেলেটা। স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেছিল। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরে ছেলেটি আস্তে আস্তে আমাদের প্রিয় হয়ে ওঠে। ও নিজের পরিচয় মনে করতে পেরেছে শুনে খুব ভাল লাগছে।’’
হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘ওই যুবকের ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য আমরা পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম। অবশেষে ওই যুবক তাঁর ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে জানতে পেরে ভাল লাগছে।’’
তেজপুর থানার সঙ্গে কথা বলার পরে মিনাখাঁ থানার পুলিশ অফিসারেরা মনে করছেন, কাজের খোঁজে বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতা এসেছিল মেঘনাদ। তার পরে তাঁকে মারধর করে মিনাখাঁর রাস্তায় ফেলে পালায় তাঁর সঙ্গীরা। যদিও এ বিষয়ে এখনও আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ।