প্রতীকী ছবি।
একাধিক বুথের যুব তৃণমূল সভাপতি থেকে শুরু করে তাঁদের আত্মীয়-পরিজনের নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। সকলেরই পাকা বাড়ি আছে বলে অভিযোগ। যাচাই পর্বে তৃণমূলের বহু নেতা, পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধানেরা আবাস যোজনার তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দিতে তৎপর হয়েছেন। কিন্তু কাকদ্বীপের রবীন্দ্র পঞ্চায়েতের ছবিটা অপরিবর্তিত।
জগধাত্রীপুর বুথের তৃণমূল যুব সভাপতি ইন্দ্রজিৎ হালদার পাকা বাড়িতে থাকেন। দুই ভাই, মা থাকেন সঙ্গে। পরিবারের চারজনের মধ্যে তিনজনের নামই আবাস প্লাস তালিকায় আছে। এক ভাই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন। অন্য ভাই ডাককর্মী। যুব সভাপতির কাকুর বাড়ির কাকুর নাম-সহ তাঁর দুই ছেলের নামও আছে তালিকায়। তাঁদেরও পাকা বাড়ি বলে জানালেন কিছু গ্রামবাসী। যুব সভাপতির জ্যেঠু এবং তাঁর দুই ছেলের নামও তালিকায় উঠেছে। পাকা বাড়ি আছে তাঁদেরও। সব মিলিয়ে পরিবারের ৯ জনের নাম তালিকায় উঠেছে।
ইন্দ্রজিতের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার পাকা বাড়ি ঠিকই। তবে এখানে দুই ভাই ও মাকে নিয়ে থাকি। বাকি সকলে আলাদা থাকেন। এই বাড়ি আমার বাবা তৈরি করেছিলেন। কাকা-জ্যাঠারা আলাদা থাকেন, তাই তাঁদের কথা বলতে পারব না।’’
পাকা বাড়ি আছে বলে তালিকা থেকে কি নাম তুলে নেবেন? শাসকদলের যুব নেতার জবাব, ‘‘আমি বিষয়টা ভাল করে জেনে পরে জানাবো। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’’
এই পঞ্চায়েতের কোয়াবেড়িয়া গ্রামের বুথ সভাপতি নবকুমার প্রামাণিকের নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর ঢুকেছিল। বুথ সভাপতি নিজে তা স্বীকার করেন। বর্তমানে আবাস প্লাস তালিকায় ওই বুথ সভাপতির স্ত্রী, মা, ছেলে ও দাদার ছেলের নাম আছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিজে শাসকদলের বুথ সভাপতি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে নাম তুলেছেন নবকুমার।
আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন নবকুমার। তা হলে স্ত্রীর নাম আবাস প্লাস তালিকায় তুললেন কেন? এ প্রসঙ্গে নবকুমারের সাফাই, ‘‘আবেগে নাম তুলেছিলাম। তালিকা তৈরির সময়ে সকলে নাম দিয়েছিলেন। সেই দেখে আমিও দিয়েছিলাম। একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর নাম থাকা উচিত নয়। আধিকারিকেরা তদন্ত করে বাদ দিয়ে দেবেন। আর আমি মন থেকে বাদ দিয়ে দেব।’’ নবকুমারের ছেলে, দাদার ছেলে— আলাদা থাকেন। এঁদের নামও আবাস প্লাস তালিকায় উঠেছে।
একই পঞ্চায়েত এলাকার জহরপুর গ্রামের তৃণমূল বুথ সভাপতি রাজেশ ঘোষ। দোতলা পাকা বাড়িতে ভাই, মা, ঠাকুমাকে নিয়ে থাকেন। আবাস প্লাস তালিকায় বুথ সভাপতির নাম তো আছেই, তাঁর ভাই, মা ও ঠাকুমার নামও আছে।
বুথ সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘তালিকা প্রকাশের আগে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তদন্ত করে দেখুক প্রশাসন।’’ কিন্তু আপনার তো পাকা বাড়ি। তা হলে একই পরিবারের চারজনের নাম আবাস প্লাস তালিকায় উঠল কী করে? রাজেশ বলেন, ‘‘আমার নিজের টাকায় বাড়ি তৈরি করেছি। তা বলে কী সরকারি বাড়ি পাব না! একই পরিবারের কুড়িজনের নাম থাকতে পারে।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘পেটের ভিতর যে আছে (গর্ভস্থ সন্তান) তার নামও থাকতে পারে। আপনাদের কী সমস্যা!’’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সংশোধিত তালিকা তৈরির জন্য সমীক্ষা হয়েছিল ২০১৭ সালে। চূড়ান্ত তালিকার আগে এখন চলছে যাচাই পর্ব। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি থেকে ছোট-বড় নেতাদের আবাস প্লাস তালিকায় নাম। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে বাড়তি সতর্ক দল। সে কারণে জেলায় জেলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পাকা বাড়ি থাকলে তালিকায় থেকে যেন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও নেতা বা তাঁদের আত্মীয়েরা নাম তুলেও নিচ্ছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম রবীন্দ্র পঞ্চায়েত।
স্থানীয় বিজেপি নেতা মেঘনাদ দেবশর্মা বলেন, ‘‘যে আবাস প্লাস তালিকা প্রকাশ হয়েছে, তাতে তৃণমূলের বহু লোকজনের নাম আছে। অনেকের বহু নিকটাত্মীয়ের নাম আছে।’’ তিনি জানান, বিডিওর কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত করে তালিকা তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। গরিব মানুষ যেন বাদ না যান, সেই আর্জিও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তৃণমূলের কাকদ্বীপ ব্লক সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
কাকদ্বীপের বিডিও ঋক গোস্বামী বলেন, ‘‘একই পঞ্চায়েত এলাকায় যে ১৭ জনের নামের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম আছে। ইতিমধ্যে বুথে বুথে যাচাই করে ৫ জনের নাম বাদ গিয়েছে। বাকিদের নাম একদিনের মধ্যে আমরা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি এঁরা সরকারি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য না হন, তা হলে সব নাম বাদ যাবে।’’