হাতে-হাত: পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। নিজস্ব চিত্র
মাস কয়েক আগে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবানেরা। আতঙ্কে সে দেশ ছাড়তে শুরু করেন বহু মানুষ। ভিড় বাড়ে কাবুল বিমানবন্দরে। বিমানে উঠতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। চলন্ত বিমান থেকে পড়ে মৃত্যু হয় অনেকের।
কাবুল বিমান বন্দরের সেই অস্থিরতার চিত্রই এ বার উঠে এসেছে গোপালনগর থানার পাল্লা দক্ষিণপাড়ার পুজোয়। তাদের এ বারের থিম ‘জীবন যুদ্ধে কাবুল’। উদ্যোক্তারা জানান, এই এলাকার একাধিক যুবক কর্মসূত্রে থাকতেন আফগানিস্তানে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরে তাঁরা ফিরে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এ বারের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ছবি, মডেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এক টুকরো কাবুল বিমান বন্দর।
মণ্ডপে দেখা যাচ্ছে রানওয়ে। সেটা পেরিয়ে প্রতিমা দর্শন করতে হবে। প্রতিমা থিমের সঙ্গে মানানসই। স্থানীয় শিল্পী গুপিনাথ চক্রবর্তী প্রতিমা তৈরি করেছেন। শনিবার পুজোর উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন এক কাবুল ফেরত যুবক। গোপালনগরের এই পুজো এ বার ৮৬ বছরে পা দিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় নজির এই পুজো। পিরবাবার প্রাচীন মাজার ঘেঁষে একফালি মাঠে প্রতি বছর পুজো হয় দেবী দুর্গার। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই সামিল হন পুজোয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পুজো কমিটির ইয়া মণ্ডল, ইয়াসিন মণ্ডল, সালাহউদ্দিন মণ্ডল, জসিমুদ্দিন মণ্ডল, জিয়ারুল মণ্ডল, শাহজাহান মণ্ডল, কিশোর দে, উৎপল মণ্ডল, রবিন দাস, মনোজ রায়, বাদল দাসরা এখন চূড়ান্ত ব্যস্ত। জানালেন, প্যান্ডেলের জন্য বাঁশ কাটা, বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুজোর চাঁদা তোলা— সবটাই হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
পুজো কমিটির সম্পাদক কিশোরকুমার দে বলেন, “আমাদের এখানে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভিত কতটা দৃঢ়, তা এখানে না এলে বোঝা সম্ভব নয়। পুজোয় প্রতিমা মণ্ডপে তোলা থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, বাঁশ কাটা, প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া সব আমরা এক সঙ্গে করি। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে তিনদিনের মেলা বসে পির বাবার মাজারে। সেটাও আমারা একত্রে আয়োজন করি।” স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ কাদের মণ্ডল বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এই পুজো আমরা এক সঙ্গে মিলেমিশে আয়োজন করি। পুজোর ক’টা দিন হিন্দু ভাইদের সঙ্গে আমরাও আনন্দে মেতে উঠি। কোনও ভেদাভেদ নেই।” সিরাজুল মণ্ডলের কথায়, “অন্যত্র কী অবস্থা জানি না। তবে আমাদের এখানে সকলে শান্তিতে বসবাস করি। ইদ, পুজো, মেলায় একত্রে মেতে উঠি। এটাই আমাদের পরম্পরা।”