বন্ধ: পড়ে রয়েছে পাইপ, কুলপির দামোদরপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিতে প্রায় চার বছর আগে শুরু হয় ফলতা-মথুরাপুর জল প্রকল্প। প্রায় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দশটি ব্লকে পাইপালাইনের মাধ্যমে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, এত দিনেও জল সরবরাহের পরিকাঠামো তৈরি হয়নি অনেক জায়গাতেই। ফলে জল সরবরাহের কাজ কার্যত বিশ বাঁও জলে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২, ফলতা, মথরাপুর ১ ও ২, মন্দিরবাজার, কুলপি, মগরাহাট ১ ও ২ এবং জয়নগর ব্লকে জল পৌঁছবে। নোদাখালির ডোঙাড়িয়া জল প্রকল্প থেকে পাইপলাইনের সাহায্যে ওই সমস্ত ব্লকের গ্রাউন্ড রিজার্ভার অর্থাৎ মাটির নীচে জল সঞ্চয় করে রাখার জায়গায় জল আসবে। সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে জল যাবে ওভারহেড রিজার্ভার অর্থাৎ মাটি থেকে অনেকটা উপরে তৈরি জল সঞ্চয়ের জায়গায়। সেই ওভারহেড রিজার্ভার থেকে পাইপলাইনের সাহায্য জল পৌঁছে যাবে বাড়িতে বাড়িতে। অর্থাৎ প্রতিটি ব্লকে একাধিক গ্রাউন্ড ও ওভারহেড রিজার্ভার তৈরি ও পাইপলাইন পাতার প্রয়োজন। কোনও কোনও ব্লকে কাজ এগিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু একাধিক জায়গায় কাজ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ।
কুলপি ব্লকে যেমন বেশ কিছুদিন ধরেই থমকে রয়েছে জল প্রকল্পের জন্য গ্রাউন্ড রিজার্ভার তৈরির কাজ। বছর চারেক আগে কুলপির করঞ্জলি পঞ্চায়েতের দামোদরপুর গ্রামের কাছে গ্রাউন্ড রিজার্ভার তৈরির জন্য প্রায় চার জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তার জন্য প্রায় ৮৫টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৪৫ টি পরিবারের ঘর নির্মাণের জন্য সরকারি সাহায্য করতে হয়। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, চার বছরে শুধু প্রকল্পের জায়গা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং যাতায়াতের রাস্তা তৈরি হয়েছে। তার বেশি কাজ এগোয়নি। রিজার্ভার তৈরির জমি দীর্ঘদিন ধরেই ভরে রয়েছে হোগলার জঙ্গলে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জল প্রকল্পটি চালু হলে শুধু কুলপি ব্লকেরই প্রায় ৬১ হাজার পরিবারের বাড়িতে জল পৌঁছবে। তবে এলাকার মানুষের দাবি, আগে তাও মাঝে মধ্যে কর্মীদের প্রকল্প এলাকায় আসতে দেখা যেত। বেশ কিছুদিন ধরে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বাসিন্দারা জানান, এলাকায় জল সঙ্কট রয়েছে। গরম পড়লে আর পানীয় জলের কলগুলি থেকে জল মেলে না। এই পরিস্থিতিতে জল পৌঁছনোর কাজ থমকে থাকায়, আদৌ বাড়িতে জল মিলবে কিনা তা নিয়ে আসঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। করঞ্জলি পঞ্চায়েতের প্রধান শান্তনু কয়াল বলেন, “প্রায় চার বছর হতে চলল। প্রকল্পের কাজে কোনও গতি নেই। এখন কাজ প্রায় থমকে রয়েছে। ওরা মাঝে মাঝে আসে, আবার ফিরে যায়। অথচ এলাকায় গরমের সময় জলের সঙ্কট শুরু হয়ে যায়। প্রকল্পটি চালু হলে মানুষ জল কষ্ট থেকে রেহাই পাবে।” প্রধানের দাবি, দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য জল প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। সেই সময় তারা আশ্বাস দিলেও, পরে আর কাজ করে না।
কুলপির বিডিও দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডোঙাড়িয়া জল প্রকল্প থেকে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের হটুগঞ্জ মোড় হয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে করঞ্জলি পর্যন্ত পাইপ বসানো দরকার। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না মেলায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। মূলত এই কারণেই কাজ থমকে রয়েছে। ওই সমস্যা মিটলেই দ্রুত জল প্রকল্প রূপায়িত হবে।”