ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে বাসে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
না আছে আগাম ঘোষণা, না আছে প্রশাসনের নজরদারি। বাড়ছে বাস-অটো-ট্রেকারের ভাড়া। পকেটে চাপ পড়ছে নিত্যযাত্রীদের। আজ নজরে উত্তর ২৪ পরগনা।
হাবড়ার বাসিন্দা অভি রায় সপ্তাহে দু’দিন গোপালনগরের নহাটায় এক শিক্ষকের কাছে পড়তে যান। হাবড়া থেকে বাসেই যান তিনি। দিন কয়েক আগেও এই পথে বাস ভাড়া ছিল ২০ টাকা। অভিযোগ, হঠাৎ করেই ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভাড়া। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বেশি খরচ করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে ওই যুবককে। করোনা পরিস্থিতি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার করে গত কয়েকদিনে বহু রুটের বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ফলে দৈনিক খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পকেট ফাঁকা হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। অভিযোগ, সরকারি অনুমতি ছাড়াই বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। বর্ধিত ভাড়ার কোনও চার্টও টাঙানো হয়নি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, হাবড়া থেকে নৈহাটি পর্যন্ত বাস ভাড়া ছিল ২৬ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। বনগাঁ থেকে বাগদার মধ্যে কোনও রেলপথ নেই। ফলে বাসই অন্যতম ভরসা। সেখানেও ভাড়া বেড়েছে অনেকটা। বনগাঁ থেকে নিয়মিত বারাসত যাতায়াত করেন সুধীর বিশ্বাস। তিনি বললেন, “ট্রেনে ভিড় হয় বলে বাসে যাতায়াত শুরু করেছিলাম। কিন্তু রোজ ১০ টাকা অতিরিক্ত বাস ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আবারও ট্রেনে যাতায়াত করছি।” ভাড়া বেড়েছে বনগাঁ-চাকদহ রুটেও। বসিরহাট চৌমাথা থেকে সন্দেশখালির ন্যাজাট বাজার পর্যন্ত আগে বাসে ভাড়া নেওয়া হত পঁচিশ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে পঁয়ত্রিশ টাকা। মিনাখাঁর মালঞ্চ বাজার থেকে বাসে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগত কুড়ি টাকা। এখন পঁয়ত্রিশ টাকা লাগছে।
বাস মালিক সংগঠনগুলি অবশ্য ভাড়া বাড়ানোর কথা মানছে না। বনগাঁ-দক্ষিণেশ্বর ডিএন ৪৪ রুটের বাস মালিক সমিতি সূত্রের খবর, ভাড়া একই আছে। তবে যাত্রীদের কাছে অনুরোধ করা হয় ২-৩ টাকা বেশি দিতে। এটা অনুদান হিসাবে চাওয়া হয়। কারও কাছে জোর করা হয় না। যাঁরা দিতে চান না, তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। এক বাস মালিক বলেন, “ডিজেলের দাম যখন ৫৪ টাকা লিটার ছিল তখন যা ভাড়া ছিল, এখনও তাই ভাড়া। কী ভাবে বাস চালানো সম্ভব?” মিনাখাঁর মালঞ্চের বাস মালিক আব্দুল্লা মোল্লা বলেন, “আগে মালঞ্চ থেকে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত প্রায় দেড়শো জন যাত্রী উঠত। এখন কিন্তু করোনার জন্য পঞ্চাশ জনের বেশি যাত্রী তুলতে পারছি না। এই ক্ষতি মেটাতে কিছুটা অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।”
শুধু বাসেই নয়, ভাড়া বেড়েছে অটো-সহ অন্যান্য ছোট যাত্রিবাহী গাড়িতেও। মিনাখাঁর মালঞ্চ বাজার থেকে ভেবিয়ার মুরারিশাহ চৌমাথা পর্যন্ত আগে অটোতে ভাড়া নেওয়া হতো দশ টাকা। এখন ভাড়া হয়েছে পনেরো টাকা। খোলাপোতা থেকে বাদুড়িয়া পর্যন্তও অটো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এক লাফে বেড়ে তা ১৫ টাকা হয়েছে। আগে টেটো বা অটোতে নূন্যতম দূরত্ব যেতে ৫ টাকা লাগত। এখন তা বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে বহু জায়গাতেই। হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা নিত্যযাত্রী সমরেশ মণ্ডল বলেন, “কাজের জন্য রোজ বসিরহাটে যেতে হয়। যা পরিস্থিতি, যাওয়া আসা মিলিয়ে এখন প্রায় একশো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে উপার্জন কমেছে। কিন্তু ব্যয় বেড়েই চলেছে। এ ভাবে যাতায়াত আর সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু উপায় নেই।”
জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাস ভাড়া বাড়া নিয়ে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।