এই হাসপাতালটিকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল করার দাবি দীর্ঘদিনের। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গত বছর ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। রাতে হঠাৎই গোবরডাঙা পুরসভা এলাকার বাসিন্দা এক বৃদ্ধের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের লোকজন অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। কারণ, বাড়ির পাশে থাকা গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে কোনও চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না। বৃদ্ধকে অবশ্য বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর ছেলে বলেন, “শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরেই যদি এলাকার হাসপাতালে বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো যেত, তা হলে হয় তো ওঁকে হারাতে হত না।”
কিছু দিন আগে রাতে আড়াই বছরের শিশুর নাকে শোলার টুকরো ঢুকে গিয়েছিল। এলাকার একমাত্র হাসপাতাল বন্ধ থাকায় শিশুটিকে প্রথমে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রাতে চিকিৎসকেরা নাক থেকে শোলার টুকরো বের করেন। সে যাত্রায় শিশুটি বেঁচে গিয়েছিল।
গোবরডাঙা পুরসভা এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা প্রায়ই এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। কারণ, এলাকার একমাত্র গ্রামীণ হাসপাতালটি দীর্ঘ দিন ধরে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৮ বছর আগেও হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। সর্বক্ষণ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকতেন। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা ছিল। রাত-বিরেতে অসুস্থ মানুষের ভরসার জায়গা ছিল হাসপাতালটি।
করোনা পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ পরিচালিত এই হাসপাতালটিকে স্বাস্থ্য দফতর করোনা হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করে। সেখানে এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়। সাধারণ রোগীদের জন্য দিনের কয়েক ঘণ্টা বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা মেলে। রাতে পরিষেবা পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। গত কয়েক বছরে ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি পুর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছে। ভোট মিটে গেলে কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বলে অভিযোগ। গত বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গোবরডাঙায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে এসে হাসপাতাল চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন।
বাসিন্দাদের দাবি, এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ বার হাসপাতালটিকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে চালু করুক স্বাস্থ্য দফতর। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ। সংগঠনের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভা ভোটে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের কাছে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে হিসেবে গড়ে তোলার দাবি থাকবে।”
কয়েক বছর আগে প্রশাসনিক বৈঠকে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল চালুর কথা বলে তৎকালীন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েছিলেন। এলাকার মানুষ সুভাষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। বন্ধও পালন করা হয়। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। পুরভোটের প্রচারে গোবরডাঙার বেহাল চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে উঠে আসছে হাসপাতাল প্রসঙ্গ। বিরোধীদের বক্তব্য, হাসপাতাল নিয়ে রাজ্য সরকার গোবরডাঙার মানুষকে বার বার বঞ্চিত করেছে।
পুরভোটের প্রার্থী তথা গোবরডাঙার বিজেপি নেতা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও পান না। অনেক রোগীকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বা কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুল্যান্সে মারাও গিয়েছেন। এলাকার হাসপাতালে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা পেলে হয় তো বেঁচে যেতেন। এ সব ঘটনার সম্পূর্ণ দায় তৃণমূলের।”
সিপিএম প্রার্থী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান বাপি ভট্টাচার্যের কথায়, “পুর এলাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে কিছুই নেই। মুমূর্ষু শহরে পরিণত হয়েছে গোবরডাঙা। রাতে মানুষ আতঙ্কে থাকেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে নাজেহাল হতে হয়।”
পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত বলেন, “গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটি এখন রাজ্য সরকার কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চালু করেছে। করোনা আক্রান্ত মানুষ সেখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা আশাবাদী, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, পুরসভা ভোটের পরে হাসপাতালটি রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই পূর্ণাঙ্গ সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে চালু করবে।”