বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সৌর প্যানেল। ছবি: সুমন সাহা
বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল। দিনে তা শক্তি সঞ্চয় করছে। আর রাতে তা থেকে জ্বলছে আলো, চলছে পাখা। দক্ষিণ বারাসত এবং সংলগ্ন এলাকায় কিছু কিছু বাড়িতে এটাই এই মুহূর্তে চেনা ছবি।
বছর খানেক আগে দক্ষিণ বারাসতের রায়নগর গ্রামে জায়গা কিনে বাড়ি বানানো শুরু করেন বিমা সংস্থার কর্মী শিখা অধিকারী। যখন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন সেই জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি বসলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু ছিল না। খুঁটি আছে যখন বিদ্যুৎ আসবে—এমনই ভেবেছিলেন শিখা। কিন্তু আজও বিদ্যুৎসংযোগ আসেনি।
বেশ কয়েক মাস হল বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে নিয়েছেন শিখা। দু’কামরার বাড়িতে তাঁর সাত-আটটা আলো, দু’টি পাখা চলছে সৌর বিদ্যুতেই। এখন আর তাই বিদ্যুতের ভরসায় থাকেন না শিখা। তিনি বলেন, ‘‘দিব্যি চলছে। মাসিক বিলের হ্যাপাও নেই। লোডশেডিংয়ের ঝামেলা নেই। একবার খরচ করে বসিয়ে নিলে নিশ্চিন্ত।’’
শুধু শিখা নন, প্রত্যন্ত এই গ্রামে অনেক বাড়িতেই বসেছে সৌর প্যানেল। ফলে বিদ্যুৎ এল কী না এল— তা নিয়ে এখন আর কিছু যায় আসে না গ্রামবাসীদের বলে জানালেন তাঁরা। যাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎসংযোগ আছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এর পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎও ব্যবহার করছেন।
এলাকায় সৌর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে বলে জানালেন দক্ষিণ বারাসতের সৌর প্যানেল সরবরাহকারী এক যুবক। শেখর দাস নামে ওই যুবক বছরখানেক আগে সৌর প্যানেল ও সৌর বিদ্যুৎ থেকে আলো জ্বালানোর খুঁটিনাটি জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করেন এলাকায়। তিনি জানান, সৌর বিদ্যুতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অপ্রচলিত পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস নিয়ে আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। পরিবেশ বাঁচাতে এগুলির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া এখন আর কোনও উপায়ও নেই। শহরে অনেক মানুষই এখন এ সব ব্যবহার করছেন।’’ তিনি আরও জানান, গ্রামাঞ্চলে প্রথম-প্রথম সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে তেমন সচেতনতা ছিল না। তবে ইদানীং অনেকেই উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তিনি নিজেও অনেককে এ নিয়ে বোঝাচ্ছেন। সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে খোঁজ খবর নিতে রোজই লোকজন আসছেন তাঁর দোকানে। কেউ কেউ সরঞ্জাম কিনছেনও বলে জানান তিনি।
স্থানীয় চিকিৎসক এবং পরিবেশকর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে মানুষের উৎসাহ বাড়ছে, এটা খুবই আশার। অপ্রচলিত শক্তি উৎসগুলির মধ্যে সব চেয়ে বড় হল সৌর বিদ্যুৎ। শুনেছি, সরকারি ক্ষেত্রেও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটা একদিকে যেমন সাশ্রয়ী, তেমন পরিবেশ বান্ধবও।’’