ভাঙড় ২ ব্লকের কাঁঠালিয়া এলাকার নালায় আবর্জনা। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি বছরে এই স্বাস্থ্য জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ১২৪৯ জন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৬৬। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে চিন্তিত জেলা প্রশাসন।
মূলত আলিপুর সদর, বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমা নিয়ে এই স্বাস্থ্য জেলা। জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ। তিন মহকুমার মধ্যে বারুইপুরেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। চলতি বছরে বারুইপুর মহকুমায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৫ জন। এর মধ্যে ভাঙড় ২ ব্লকেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ জন। ভাঙড় ১ ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭। এ ছাড়াও, বারুইপর ব্লকে ৪১, জয়নগর ১ ব্লকে ৩৫, জয়নগর ২ ব্লকে ২০, সোনারপুরে ৩০ জন, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকায় ২৭ জন আক্রান্ত। ক্যানিং মহকুমা এলাকায় চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ১২১। আলিপুর সদরে আক্রান্তের সংখ্যা ২২০।
স্বাস্থ্য জেলার বিভিন্ন জেলা, মহকুমা ও ব্লক হাসপাতাল মিলিয়ে বর্তমানে দু’শোর বেশি ডেঙ্গি রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য বেশ কিছু কলকাতার বাসিন্দাও আছেন। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পরীক্ষার উপরে
জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই স্বাস্থ্য জেলায় অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে এনএস-১ টেস্ট হয়েছে ৫১,২৮৬ জনের। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট রয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, “জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করানো এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। নিজের মতো করে ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গি মোকাবিলায় সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে।”
জেলার বিভিন্ন ব্লকেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রশাসনের ভূমকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙড় ১, ২ ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। কিন্তু অভিযোগ, এলাকায় সে ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় জল জমে রয়েছে। নিকাশি নালা সাফ করা হচ্ছে না। মশার লার্ভা মারতে রাসায়নিক স্প্রেও হচ্ছে না। ব্লিচিং ছড়ানো থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। দুই ব্লকেই ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। ব্লক হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে রোগীদের ভিড়। এর মধ্যেই জিরেনগাছা এলাকায় জমা জলে মশার লার্ভা মিলেছে।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। মশার লার্ভার উৎস খুঁজে বের করে তা নির্মূল করার চেষ্টা করা
হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর, মহকুমা, ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”