সন্তানকে কোলে নিয়ে তাজমিরা। নিজস্ব চিত্র।
স্বামী বিয়ের কিছুদিন পরই নিরুদ্দেশ। এ দিকে কথা বলতে অক্ষম মহিলা অন্তঃসত্ত্বা। সম্প্রতি তিনি জন্ম দিয়েছেন সন্তানের। বিশেষভাবে সক্ষম ওই মহিলা সন্তানের জন্ম দিয়ে যখন অথই জলে, তখন তাঁকে বিয়ে করলেন এক সহৃদয় ব্যক্তি। সদ্যোজাত শিশুর সামনে তার মাকে বিয়ে করে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুরের মহসিনউদ্দিন। সন্তানহীনা স্ত্রীর সম্মতিতেই ওই মূক মহিলাকে বিয়ে করেছেন তিনি।
দেগঙ্গার বেলপুরের বাসিন্দা ফকির আহমেদ। তাঁর বিশেষভাবে সক্ষম মেয়ে তাজমিরা বিবিকে এক বছর আগে এক ব্যক্তি বিয়ে করেন। তাঁর কিছুদিন পরই নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। দেগঙ্গা থানায় অভিযোগ দায়ের ও অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তখন তাজমিরাও অন্তঃসত্ত্বা। বাবা ফকির আহমেদ দিনমজুর। অভাবের কারণে মেয়ের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। সম্প্রতি প্রসব বেদনা ওঠায় ফকির মেয়েকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় প্রসব বেদনায় তাজমিরাকে কাতরাতে দেখেন দেগঙ্গা কলসুর এলাকার বেসরকারি নার্সিংহোমের মালিক আনসার আলি। তিনিই নিজের নার্সিংহোমে তাজমিরার প্রসব করান। তাজমিরা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। গরিব বাবা যখন মেয়ে ও তাঁর সন্তানকে কী ভাবে পালন করবেন ভেবে পাচ্ছেন না, তখনই দেবদূতের মতো তাজমিরার জীবনে এলেন মহসিনউদ্দিন।
এই কন্যাসন্তান জন্মের খবর পেয়েছিলেন মহসিনউদ্দিন। তার পর তিনি নার্সিংহোমে এসে হাজির হন। এবং বিয়ে করার কথা জানান। নার্সিংহোমের মালিক ও বাকিদের ব্যবস্থাপনায় শরিয়তি মতে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। নতুন বাবা পায় ওই সদ্যোজাত। তাজমিরা পান নতুন জীবন। এই বিয়ে বেআইনি নয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ বিষয়ে আইনজীবী দীপাঞ্জয় দত্ত বলেছেন, ‘‘মুসলিম শরিয়তে মেনে এখনও পর্যন্ত একাধিক বিয়ে করা যায়। নতুন আইন আসছে। আইন পাশ হলে একাধিক বিয়ে করতে বাধার সম্মুখীন হতে হবে।’’
তাজমিরার কন্যাসন্তান। নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়িও ফিরেছেন মহসিনউদ্দিন। বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি নিয়েই এই বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার স্ত্রী নুরজাহান কোনওদিন মা হতে পারবে না। ওর সম্মতিতে তাজমিরাকে বিয়ে করে তাঁর সন্তানের পিতা হওয়ার দায়িত্ব নিয়ে ভাল লাগছে।’’ মহসিনউদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বলেছেন, ‘‘আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। আনন্দে থাকব।’’ মহসিনউদ্দিনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। তাজমিরার ভাই সাহেবউদ্দিন গোলদার বলেছেন, ‘‘আমার এই বোনকে দেখার মতো কেউ ছিল না। ওকে নিয়ে আমরা খুবই চিন্তায় ছিলাম। এখন নিশ্চিন্ত হলাম।’’ যাঁর উদ্যোগে তাজমিরা নতুন জীবন পেলেন সেই নার্সিংহোমের মালিক আনসার আলি বলেছেন, ‘‘এমন একটা ভাল কাজে যুক্ত হতে পেরে খুব আনন্দ পেলাম।’’