বিপজ্জনক: এই ধরনের শুকনো ডাল থেকেই বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। নিজস্ব চিত্র।
গাছের পেল্লায় ডাল ভেঙে ট্রাকের উপরে পড়ে বৃহস্পতিবার রাতে বনগাঁ-চাকদহ সড়কে মৃত্যু হয় ট্রাক চালক যুবকের। ওই ঘটনার পরে দাবি উঠেছে, যশোর রোডের দু’পাশে থাকা বহু বছরের পুরনো গাছগুলির মরা এবং শুকনো বিপজ্জনক ডাল কেটে ফেলা হোক। একই সঙ্গে যশোর রোডের গাছগুলির উপযুক্ত পরিচর্যারও দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
বনগাঁর পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘যশোর রোডে বেশ কিছু গাছে শুকনো, মরা ডাল বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সব ডাল কাটতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।’’
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখার সহ সম্পাদক তথা পরিবেশ কর্মী দেবাশিস বসু জানান, ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, যশোর রোডের জনক কালী পোদ্দার তৎকালীন সময়ে রাস্তা এবং গাছের যত্নের জন্য বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে শতাব্দী প্রাচীন গাছের যত্ন নিতে দেখা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘এই শিরীষ এবং খিরিষ গাছগুলি সর্বোচ্চ চার-পাঁচশো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। খুব স্বাভাবিক, এরই মাঝে তাদের বহু শাখা, ডাল শুকিয়ে মরে যাবে। নুতন শাখা, ডাল তৈরি হবে। সে দিকে খেয়াল রেখে মাঝে মধ্যে মরা ডাল কেটেছেঁটে দেওয়া দরকার। সেটা হয় না বলেই মাঝে মধ্যে ডাল ভেঙে দুর্ঘটনা হয়। প্রাণহানি হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নিজেদের অজ্ঞতা, উদাসীনতাকে আড়াল করার জন্য গাছেদের খলনায়ক বানাই।’’
যশোর রোডে বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত প্রায় ষাট কিলোমিটার পথে কিছু শুকনো মরা ডাল বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে বলে অভিযোগ। ওই পথে এর আগে বহুবার গাছের ডাল ভেঙে মানুষের মৃত্যু বা জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় মানুষ ও যান চালকেরা শুকনো ডাল কাটার দাবি তুলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অতীতে কিছু ডাল কাটাও হয়েছিল। অভিযোগ, নিয়মিত ভাবে মরা শুকনো ডাল কাটার ব্যবস্থা করা হয় না।
প্রাচীন গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। গাছের গায়ে ঘুঁটে দেওয়া হয়। গোড়ায় গরম চা, জল, আবর্জনা ফেলা হয়। গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে কাঠ চোরদের দৌরাত্ম্য। এসবের কারণে গাছ ও ডাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যশোর রোডের বেশ কিছু গাছ চিহ্নিত করে দিয়েছে। সেই সব গাছের শুকনো মরা ডালও কাটা যাবে না। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের চিহ্নিত করে দেওয়া গাছগুলি বাদ রেখে বাকি গাছের শুকনো মরা ডাল কাটার বিষয়ে বন দফতরের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষা করে পদক্ষেপ করা হবে।’’