উদ্ধার কিশোরী ও যুবকের দেহ। প্রতীকী চিত্র।
রেল লাইন থেকে উদ্ধার হল এক কিশোরী ও যুবকের দেহ। ধড়-মুণ্ড আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তখনও দু’জনের হাত ধরে রাখা।
সোমবার ভোরে এই দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন রেলপাড়ের বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রেলপুলিশ। জিআরপি দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়।
সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় হাবড়া-অশোকনগর স্টেশনের মাঝে, বটতলা এলাকায়। দু’জনের বাড়ি অশোকনগর--কল্যাণগড় পুর এলাকাতেই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলেন বছর বাইশের যুবক ও সতেরো বছরের কিশোরী। তাঁদের মৃত্যুর ঘটনায় দু’টি পরিবার একে অন্যকে দোষারোপ করছে। জিআরপি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মেয়েটি রবিবার রাতে ফেসবুক লাইভ করে। সেখানে বাবার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করে। জানায়, প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেননি বলে বাবা মারধর করতেন। মায়েরও তাতে মদত ছিল। অত্যাচারের ফলেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে প্রেমিকের কাছে চলে যান বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২২ ফেব্রুয়ারি দু’জন একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেছিল। মেয়েটি তারপরে চলে আসে যুবকের বাড়িতে। সম্পর্ক মেনে নিয়ে মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মত্ত অবস্থায় লোকজন নিয়ে এসে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক’দিন আগে তার বাবা বাড়িতে চড়াও হয়ে হুজ্জুত করেন বলে অভিযোগ। যুবকের মা বলেন, ‘‘মেয়ের বাবা-মা অত্যাচার করত বলে ও আমাদের বাড়ি চলে এসেছিল। ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়। বাড়িতে ওরা দু’দিন ছিল। তারপর মেয়ের বাবা লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে ঝামেলা করে। ওরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারপর এই ঘটনা।’’ যুবকের মায়ের কথায়, ‘‘মেয়ের বাড়ির এই ব্যবহারের জন্যই ওরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। আমি এর বিচার চাই।’’
এ দিকে, রবিবারই অশোকনগর থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন তার বাবা। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটাকে ওরা আটকে রেখে শেষ করে দিল। ওদের কাছে গিয়েছিলাম, যাতে মেয়েকে ফিরিয়ে আনে পারি। আমি সব মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু ওরাই মেয়েটাকে শেষ করে দিল।’’
মেয়ের বাবার দাবি, মেয়ের আদৌ বিয়ে হয়নি। শুধু শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘‘মেয়ের এখনও আঠারো বছর হয়নি তবু বলেছিলাম, বৈশাখ মাস পড়লে একটা দিন দেখে বিয়ে দেব।’’ মেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। সে প্রসঙ্গে কিশোরীর বাবার দাবি, ‘‘খোঁজ-খবর নিয়ে দেখুন, মেয়ের উপরে কোনও অত্যাচার করেছি কি না। পাড়ার লোকজন সব জানে।’’
জিআরপি জানিয়েছে, সোমবার রাত ২টো ৫৮ মিনিটে প্রথম যে ট্রেনটি বনগাঁ থেকে শিয়ালদহের দিকে যাচ্ছিল, সেই ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন যুগল। মুণ্ড ধর থেকে আলাদা হয়ে লাইনের পাশে পড়েছিল। বারাসতের পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবিবার থানায় অভিযোগ হয়েছিল। তারপর থেকে মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েটির একটি ভিডিয় আমরা পেয়েছি। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’