ক্ষতি: মগরাহাটে জলে ডোবা কৃষিজমি। ছবি: দিলীপ নস্কর।
বৃষ্টি কমলেও এখনও জল জমে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন গ্রামীণ ও পুর এলাকার রাস্তাঘাট জলমগ্ন। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। বৃষ্টিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ধান, আনাজ ও মাছ চাষিরা। অধিকাংশ চাষের জমিই জলের তলায় চলে গিয়েছে। জল উপচে ভেড়ির মাছ বেরিয়ে গিয়েছে।
পর পর দুর্যোগে এ বছর আমন ধান চাষের আশা কার্যত শেষ হলেই জানাচ্ছেন চাষিরা। ইয়াসে ঘর-জমি ভেসেছিল। মাসখানেক আগে অতিবৃষ্টিতে জল জমে ফের চাষের কাজ ব্যাহত হয়। তা-ও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছিলেন চাষিরা। তবে গত দু’দিনের টানা বৃষ্টির পরে অনেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন।
হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের কুমিরমারি গ্রামের বাসিন্দা রতন মণ্ডল জানান, ইয়াসে বাঁধ ভেঙে তাঁর সাড়ে ৩ বিঘা চাষের জমি নোনা জলে ডুবে যায়। জল কিছুটা কমলে নোনা জল সহ্য করতে পারে, এমন বিশেষ প্রজাতির বীজতলা ফেলা হয়। তবে প্রবল বৃষ্টিতে সেই বীজতলা ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। কিছু দিন আগে খরচ করে বীজতলা কিনে চাষ করেন। সেটাও গত দু’দিনের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছে। রতন বলেন, “দু’বার চেষ্টা করলাম। প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেল। জমির জমা জল সরতে অনেক দেরি হবে। সব পচে যাবে। এ বছর আর ধান চাষ করা যাবে না।”
ওই গ্রামের আর এক চাষি বাবলু মণ্ডলও দু’বারের চেষ্টায় চাষ করতে পারেননি। বাবলু জানান, দু’দফায় প্রায় তিরিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর চাষে হবে না। পুরো টাকাটাই ক্ষতি হবে।
একই পরিস্থিতি কুমিরমারির রামপ্রসাদ দাস, বাইনারা গ্রামের গৌর মণ্ডল, মামুদপুর গ্রামের কমলেশ প্রামাণিকদের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জেলার মধ্যে শুধু বসিরহাট মহকুমাতেই প্রায় পনেরো হাজার বিঘা মেছো ভেড়ির মাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দশ হাজার বিঘা ধানের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। শুধু ভেড়িই নয়, পুকুরে মাছ চাষেরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের বিশপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম খেজুরবেড়িয়া গ্রামের মাছ চাষি মানবেন্দ্র মণ্ডল বলেন, “৬টি পুকুরে মাছ চাষ করতাম। সবগুলো ডুবে গিয়েছে। প্রায় চল্লিশ হাজার টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। পুরোটাই ক্ষতি।”
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা জুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।