(বাঁ দিকে) দক্ষিণেশ্বরের বিজয় সঙ্ঘ ক্লাবের অনুদান প্রত্যাখ্যানের চিঠি। দক্ষিণেশ্বরের ওই ক্লাবের সদস্যেরা (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
‘দুর্গার ভান্ডারের’ ঝুলিতে প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ বার দক্ষিণেশ্বরের একটি ক্লাবও রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদান ফিরিয়ে দিল। ওই ক্লাবের তরফে স্থানীয় থানায় চিঠি দিয়ে অনুদান না গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
দক্ষিণেশ্বর বিজয় সঙ্ঘের পুজো এ বছর ২৩ বছরে পদার্পণ করেছে। গত দু’বছর পুজো উপলক্ষে রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদান এই ক্লাব গ্রহণ করেছে। পুজোয় জাঁকজমকও ছিল। তবে এ বছর আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে জাঁকজমক বর্জন করছেন কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে পুজো উদ্যোক্তা রনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্লাবের তরফে আমরা সকলে মিলে স্থির করেছি, যত দিন না আরজি করের নির্যাতিতা বিচার পাচ্ছেন, তত দিন এই অনুদান আমরা নেব না। পুজো হবে। তবে তা হবে আড়ম্বরহীন। পুজো হবে, কিন্তু উৎসব নয়। পুজোয় আমাদের সমস্যা হবে না। ২৩ বছর ধরে পুজো চলছে। গত দু’বছর ধরে সরকারের অনুদান পেয়েছি। তার আগে নিজেরাই করেছি। এ বারও সে ভাবেই পুজো হবে। সকলের ভালবাসা নিয়ে ছোট করে পুজো করব। অন্য পুজো কমিটির উদ্দেশেও এই আহ্বানই আমরা জানাচ্ছি। এখানে কোনও দল নেই। আমাদের বোন মারা গিয়েছে। সারা পৃথিবী দেখছে। এটা আমাদের কলকাতার লজ্জা। কেউ সমালোচনা করবেন না।’’
পুজোর আর এক উদ্যোক্তা তথা দক্ষিণেশ্বরের ওই ক্লাবের সদস্য অনুপ ঘোষাল বলেন, ‘‘এ বছর অনুদানের পরিমাণ বেড়েছিল। সরকারি টাকা পেলে আমাদের সুবিধা হত। বিজ্ঞাপন ছাড়া আমরা নিজেদের সামর্থ্যে পুজো করি। উৎসব করব, না শাস্ত্র মেনে পুজো করব, এটা আমরাই ঠিক করব। কেউ বলে দেবে না আমাদের। আমাদের মন চাইছে না। এখানে কোনও রাজনীতির ব্যাপার নেই। অন্যান্য বছর এই সময় আমাদের প্যান্ডেল হয়ে যায়। আরজি করে যে বর্বরতা হয়েছে, তা বিরলের মধ্যে বিরলতম। তার বিচার যত দিন না পাচ্ছি, তত দিন উৎসবে শামিল হতে পারছি না।’’
ক্লাবের তরফে দক্ষিণেশ্বর থানায় একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, সরকারি অনুদান তাঁরা গ্রহণ করবেন না। পুলিশ প্রত্যাখ্যানের সেই চিঠি গ্রহণ করেছে। এ বছর পুজোর অনুদান বৃদ্ধি করেছিল রাজ্য সরকার। ক্লাবগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেক ক্লাবই অনুদান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে অনুদান ফেরানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কিছু দিন আগে জানিয়েছেন, যে সব ক্লাব পুজোর অনুদানের টাকা নিচ্ছে না, তাদের টাকা অন্য নতুন ক্লাবকে দেওয়া হবে।