স্বাস্থ্য ভবনের সামনে খাবার পৌঁছে গিয়েছে। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন হাজার হাজার জুনিয়র ডাক্তার। আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন করছেন তাঁরা। ডাক্তারদের এই জমায়েতে বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ডাক্তারদের জন্য এত খাবার পৌঁছেছে সল্টলেকে, যে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে আর খাবার না পাঠানোর আর্জিও জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জলের বোতলের স্তূপ। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ডাক্তারদের ধর্না শুক্রবার চতুর্থ দিনে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে তাঁরা অবস্থানে বসেছেন। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই ধর্নায় যোগ দিয়েছেন। কয়েক হাজার ডাক্তার জমায়েত করেছেন সল্টলেকে। প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে তাঁরা পাশে পেয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসতে তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, প্রথম থেকেই তার জন্য অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর এবং রাতের খাবারের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে। সমাজমাধ্যমে একটি গ্রুপে খাবারের জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন তাঁরা। তার পর সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।
খাবার চেয়ে বৃহস্পতিবারের আর্জি।
বহু মানুষ ডাক্তারদের জন্য দুপুর এবং রাতের খাবার পাঠাতে শুরু করেছেন বৃহস্পতিবার থেকে। ভারী খাবার পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনের বেশি খাবার সেখানে জমে গিয়েছে। অতিরিক্ত খাবার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়েও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তাই এই মুহূর্তে আর খাবার না পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে আর নতুন করে খাবারের প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে আবার যখন দরকার হবে, আমরা আবেদন জানাব। তখন নিশ্চয়ই আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের দু’জন প্রতিনিধির ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছিল। সাহায্য করতে আগ্রহী বহু মানুষ সেখানে যোগাযোগ করছেন। ওই দুই প্রতিনিধি এই মুহূর্তে আন্দোলনের অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে অনেক সময়ই ফোন তুলতে পারছেন না, জানিয়েছেন ডাক্তারেরা। খাবারের জন্য যোগাযোগ করার প্রয়োজন আপাতত নেই বলেও জানিয়েছেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের ১৫ জন প্রতিনিধিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ৩২ জন প্রতিনিধি নবান্নে যান। তাঁদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে। যাতে রাজি হয়নি সরকার। দু’ঘণ্টার বেশি সময় নবান্নের সভাঘরে অপেক্ষা করে বেরিয়ে যান মমতা। তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘আমি আশা করেছিলাম, ওরা আসবে। এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব নয়। বৈঠক রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। বাংলার মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তিন দিন ধরে চেষ্টা করেও আমি এর সমাধান করতে পারলাম না। ওরা ছোট, ওদের আমি ক্ষমা করলাম। বাইরে থেকে ওদের প্রভাবিত করা হচ্ছে। কেউ কেউ বিচার চায় না, চেয়ার চায়।’’ নবান্নের সামনে থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা এর পর জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে হতাশ। কারণ, তাঁর চেয়ারের উপর ভরসা রেখেই তাঁরা বৈঠক করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার না হলে বৈঠক সম্ভব নয়। আবার ধর্নামঞ্চে ফিরে গিয়েছেন ওই ৩২ প্রতিনিধি।