রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্যান, টোটো। নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে এল ইডি। আক্রান্ত হয়েছেন অফিসারেরা। আর শাহজাহানের অনুগামীদের রোষে দিনভর ভোগান্তি হল পথচলতি মানুষজনের। সকাল থেকে পথ অবরোধ হয় জায়গায় জায়গায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস, ট্রেকার, অটো, টোটো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাঠিসোঁটা হাতে মারমুখি জনতার সামনে ট্যাঁ-ফু করার সাহস পায়নি কেউ। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিলেও ততক্ষণে অনেকেই বাস-অটো থেকে নেমে বাড়ির পথ ধরেছেন।
শুক্রবার সন্দেশখালির সরবেড়িয়া চত্বরে শেখ শাহজাহানের বাড়ি ও অফিস চত্বরে তল্লাশি চালাতে আসে ইডি আধিকারিকেরা। যার জেরে ধামাখালি-মালঞ্চ রোডে সকাল ৮টার পর থেকে যান চলাচল বিঘ্নিত হতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সরবেড়িয়া চত্বরে বহু মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। মালঞ্চ-ধামাখালি রুটের বাস-অটো থামিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা হয়। পথচলতি মানুষের চূড়ান্ত ভোগান্তি হয়েছে।
৯টা নাগাদ পুলিশ আসে, অবরোধ তুলে দেয়। তবে দিনভর ছিল আতঙ্কের পরিবেশ। ধামাখালি-মালঞ্চ রুটে দিনের বেলা বাস-অটো চলাচল বন্ধ ছিল। মানুষও ভয়ে এই পথ এড়িয়ে যান।
এই রাস্তা দিয়েই গ্রাম থেকে মানুষ কলকাতায় যাতায়াত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধামাখালি অটো স্ট্যান্ডের এক চালক বলেন, ‘‘৮টা নাগাদ জানা যায়, শাজাহানের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। তারপর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। নেতারা দাপট দেখানোর জন্য বলে দেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বেলা বাড়ার পরেও আতঙ্কে সরবেড়িয়া দিয়ে গাড়ি চালাতে চাননি অনেকে। অটো-বাস চলাচল বন্ধ ছিল। দু’এক জন ছাড়া বেশিরভাগ চালক গাড়ি বের করেননি।’’
সন্দেশখালি থানার খুলনা খেয়াঘাটে খেয়া চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ঘাট থেকে ভ্যান-টোটো চলেনি সকাল সাড়ে ১১টা থেকে। এই ভ্যান স্ট্যান্ড থেকে মানুষজন সন্দেশখালি ব্লক অফিস, বিএলআরও অফিস, ব্যাঙ্ক, থানা, বাজারে যাতায়াত করেন। স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার দু’পাশে টোটো-ভ্যানের লম্বা লাইন।
অন্যান্য দিনের মতো যাত্রী দেখে কেউ ভ্যানে ওঠার জন্য এগিয়ে আসেননি। জনা পাঁচেক ভ্যান চালককে দেখা গেল, একটি ভ্যানে বসে তাস খেলছেন। যাত্রীদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা জানিয়ে দিলেন, ভ্যান বন্ধ রাখতে নির্দেশ এসেছে। কারা দিল নির্দেশ? উত্তর মেলেনি।
সুশীল মণ্ডল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘সন্দেশখালি ২ বিডিও অফিসে যাব, তাই খুলনার বাড়ি থেকে নদী পেরোলাম। ভ্যান স্ট্যান্ডে এসে বুঝলাম, যে কোনও সময়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আঁচ করছেন অনেকে। তাই ভ্যান-টোটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুনে বাড়ি ফিরে এলাম।’’ কয়েক জন মহিলা ও পুরুষকেআবার দেখা গেল, ভ্যান-টোটো না পেয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে, ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে এগোলেন।