Poor Railway Services

বেহাল পরিষেবা, অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের

প্রতিটি কামরায় পাখা আছে বটে, তবে দম বন্ধ করা ভিড়ের মধ্যে পাখার দিকে তাকালে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। কিছু কিছু পাখা একেবারে বন্ধ হয়ে থাকে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪ ০৮:৫৩
Share:

ট্রেনের জানলার পাল্লা নেই। বৃষ্টির ছাঁট ঢোকে ভিতরে। নিজস্ব চিত্র।

ট্রেনের কামরায় জানলা আছে, পাল্লা নেই। মাথার উপরে পাখা আছে, ঘোরে না। ফলে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় ভোগান্তি পোহাতে হয় নিত্যযাত্রীদের। যাত্রীদের অভিযোগ, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেনের পরিষেবা থেকে পরিকাঠামো দিনে দিনে তলানিতে ঠেকেছে। যাত্রী পরিষেবার উন্নতির জন্য আবেদন, নিবেদন, বিক্ষোভ, আন্দোলন করেও কোনও সুরাহা হয়নি।

Advertisement

রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব রেলের ডায়মন্ড হারবার থেকে শিয়ালদহ, লক্ষ্মীকান্তপুর, নামখানা ও কাকদ্বীপ স্টেশন থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে। ডায়মন্ড হারবার-শিয়ালদহ শাখায় প্রায় ২৬ জোড়া এবং শিয়ালদহ লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় প্রায় ২৮ জোড়া লোকাল ট্রেন চলে। ডায়মন্ড হারবার থেকে শিয়ালদহের রেল পথে দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। নামখানা থেকে শিয়ালদহ প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ। সময় লাগে ৪ ঘণ্টার বেশি।

এমনকী, রায়দিঘির মথুরাপুর-১ ও ২ জয়নগর ১ ও ২, কুলতলি, মন্দির বাজার, মগরাহাট ব্লক সহ বেশ কিছু ব্লকের হাজার হাজার মানুষের নিত্য প্রয়োজনে কলকাতায় যেতে হলে ট্রেনই ভরসা। সরাসরি বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। কিন্তু ট্রেনের কামরায় জানলার পাল্লা ভাঙা, জল পড়ে বৃষ্টিতে। সব দরজা লাগে না। বৃষ্টি হলেই আসন ছেড়ে দাঁড়াতে হয় অথবা ছাতা মাথায় দিয়ে বসতে হয়। ভাঙা জানালার কাছে এমন ভাবে লোহার পাত বেরিয়ে থাকে তা লেগে যাত্রীদের পোশাক ছিঁড়ে যায়।

Advertisement

অভিযোগ, প্রতিটি কামরায় পাখা আছে বটে, তবে দম বন্ধ করা ভিড়ের মধ্যে পাখার দিকে তাকালে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। কিছু কিছু পাখা একেবারে বন্ধ হয়ে থাকে। সেগুলিকে পকেট থেকে চিরুনি বা কলম দিয়ে ঘুরিয়ে দিলে ঘুরতে থাকে। তবে পাখা ঘোরে, কিন্তু হাওয়া নেই। ভিড়ে ঠাসা কামরায় গরমে অসুস্থ পড়েন যাত্রীরা। মহিলা কামরা বলে চিহ্নিত করে কামরার গায়ে লেখা আগে বোঝা যেত, এখন তা অস্পষ্ট। ফলে ভুল করে কোনও পুরুষ যাত্রী উঠে ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হয়। বসার জায়গাগুলিও ভাঙা থাকে। জিনিসপত্র রাখার জায়গারও তথৈবচ অবস্থা। যে কোনও সময়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।

ট্রেনের কামরা নোংরা থাকে অধিকাংশ সময়। দুর্গন্ধে বসা যায় না। কামরার ভিতরে সারা দেওয়াল জুড়ে নানা বিজ্ঞাপন। দৃশ্য দূষণের ছড়াছড়ি। যাত্রীদের অভিযোগ, এমনিতেই ট্রেনের সংখ্যা কম। এই গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা যাতায়াত করতে হয়। তার উপরে পাখা খারাপ হলে গরমে কষ্ট পান যাত্রীরা। জানলার পাল্লা না থাকায় বৃষ্টির ছাঁট ভিতরে ঢুকে পড়ে। ডায়মন্ড হারবার থেকে শিয়ালদহের নিত্যযাত্রী মিহিরলাল দাস, কমল সাহাদের অভিযোগ, ‘‘আমাদের নিয়মিত শিয়ালদহ স্টেশনে যেতে হয়। মাঝে মধ্যে ট্রেনের মধ্যে আবর্জনা স্তূপ, মল-মূত্রও পড়ে থাকে। সিটে বসা যায় না। পাখা ঘুরলেও বাতাস নেই। দিনে দিনে যাত্রী সংখ্যা বাড়লেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। যে ট্রেনগুলি চলছে তার যাত্রী পরিষেবার দিকেও কোনও হুঁশ নেই রেল দফতরের।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে প্রতিটি অন্তিম স্টেশনে ট্রেনের কামরা পরিষ্কার করার জন্য সাফাই কর্মীরা আছেন। পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ট্রেনের পাখা খারাপ থাকার খবর শোনা যায়। অন্য পরিকাঠামো সমস্যা থাকলে যে কোন যাত্রী স্টেশন ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement