আগে যদি এত সব ব্যবস্থা থাকত!

কত মানুষ, গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। ধন-সম্পদ নষ্ট হয় কত মানুষের। সুন্দরবনের মানুষের জীবন-জীবিকাই বদলে দিয়ে গিয়েছিল দিনটা।

Advertisement

প্রভাসচন্দ্র নস্কর (যোগেশগঞ্জের বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩২
Share:

বিপর্যস্ত: নদীর জল বেড়ে এই পরিস্থিতি হিঙ্গলগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

সে দিনও সকাল থেকে মেঘলা মেঘলা ভাব ছিল। মুখ ভার আকাশের। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। দু’দিন ধরে এমনটা চলার পরে আয়লা এসে আছড়ে পড়ে। নদীর বাঁধ ছাপানো জলে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে গিয়েছিল। ২০০৯ সালের ২৫ মে তারিখটা সুন্দরবনের মানুষ ভুলবেন কী করে!

Advertisement

কত মানুষ, গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। ধন-সম্পদ নষ্ট হয় কত মানুষের। সুন্দরবনের মানুষের জীবন-জীবিকাই বদলে দিয়ে গিয়েছিল দিনটা। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি নষ্ট হয়। কাজের খোঁজে আয়লার পরে কত জনকে যে বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে, কে তার হিসেব রাখে!

সে কথা মনে পড়তেই আজও আমার ভয়ে বুক কাঁপে। এ বার আবার বুলবুলের চোখ রাঙানি।

Advertisement

তবে এটা ঠিক, আয়লার আগে সতর্কতা বা বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসনের তৎপরতা সে বার কিছুই প্রায় দেখিনি। সময়টা সত্যি বদলেছে। শুনছি উদ্ধারকারী দল তৈরি। স্পিড বোট, লঞ্চ রাখা হয়েছে দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য। কত মানুষকে তো আগেভাগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ এলাকায়। খাবার-জল-শিশুখাদ্য— সবেরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে সরকারের লোকজন আসছেন। খোঁজখবর করছেন। তাতে মানুষের ভরসা এসেছে। এমনটা যদি সে বার থাকত, তা হলে হয় তো মানুষের জীবনহানি বা ক্ষয়ক্ষতি এতটা হত না।

আয়লার দিন বেলা ১২টা নাগাদ প্রায় ৭ ফুট উঁচু নোনা জলে ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনার কিছু আগে জোর বাতাস বইছে দেখে আমি বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘর দড়ি দিয়ে বাঁধছিলাম। জলের ধাক্কায় ঘরে দেওয়াল ভেঙে পড়ায় বুঝতে পারি, না পালালে বাঁচব না। কোনও রকমে জিনিসপত্র সব ঢেকে রেখে পরিবারকে নিয়ে উঁচু জায়গার খোঁজে বেরিয়ে পড়ি। সে দিন হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১ ও ২ ব্লকের মানুষের বড় রকম ক্ষতি হয়েছিল। ঝড়ের দাপটে লোপাট হয়ে গিয়েছিল মাইলের পর মাইল নদী বাঁধ। নোনা জল ঢুকে চাষবাস সব নষ্ট হয়ে যায়। একটা গাছও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল না।

সেবার যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে আমাদের আশ্রয় হয়। আগে ত্রাণ শিবিরে এখনকার মতো খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না বলে দু’দিন না খেয়ে থেকেছি। পরে আলু সিদ্ধ, ভাত জোটে। পানীয় জলের চরম সঙ্কট ছিল। পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে সরকারি ভাবে পানীয় জলের ব্যবস্থা যদি বা হল, স্নানের জল পাওয়া যেত না। ফলে আমরা নোনা জলে স্নান করতাম। আয়লার পরে দু’মাস ধরে ভাঙা ঘরের মধ্যে দুর্গন্ধ ছিল। সব সময়ে ধুপধুনো জ্বালিয়ে রাখতে হত।

এখন অবশ্য এলাকায় মাটির বাড়ির সংখ্যা অনেক কম। আমিও আয়লার পরে এখন পাকা বাড়ি করেছি। নদী বাঁধও অনেকটা শক্ত।

এই পরিস্থিতিতে নদীতে জল বাড়লেও আগের চেহারা নেবে না বলেই আশা করা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement