প্রতীকী ছবি।
পূর্ণিমার ভরা কোটালে নদীর জল বাড়ার আগে বাঁধ বাঁধা হবে তো—এই নিয়ে চিন্তিত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। হাসনাবাদের পাটলিখানপুর এলাকায় ডাঁসা নদীর অনন্ত ছয় জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। ১০-১২টি গ্রাম নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে। চারটি জায়গা ব্লক ও পঞ্চায়েত থেকে একশো দিনের প্রকল্পে গ্রামের মানুষকে দিয়ে বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। ঘূর্ণি টিলারচক গ্রামে বেআইনি মেছোভেড়ি এলাকা এবং টিয়ামারি ইটভাটার ডগ ভেঙে জল ঢুকেছে। কাজের যা গতি তাতে ভরা কোটালের আগে বাঁধ বাঁধা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্লকে অনন্ত ৬৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছে। অনেক জায়গায় আবার জল ঢুকে ফাটল বড় হয়েছে। কাজ চলছে। এলাকার মানুষের জন্য পঞ্চায়েতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল, পলিথিন এবং খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’
রবিবার ঘূর্ণি টিলারচক গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক মানুষ বাঁশ, মাটি, সালবল্লার খুঁটি দিয়ে ডাঁসা নদীর বাঁধ বাঁধতে ব্যস্ত। ভাঁটা থাকায় তখন জল নদীতে নামছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগামী তিন দিন পর পূর্ণিমার ভরা কোটালে জল বাড়বে নদীতে। কাজের যা গতি তাতে মেশিন ছাড়া নদীতে বাঁধ বাঁধা সম্ভব নয়। ভাঙনের পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী আব্দুর রহিম গাজি বলেন, ‘‘জোর কদমে বাঁধ মেরামতের পাশাপাশি পঞ্চায়েত থেকে দুর্গত মানুষদের পর্যাপ্ত ত্রাণের খাবার, পানীয় জল এবং পলিথিন দেওয়া হচ্ছে।’’ ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী আব্দুর রহিম গাজির কথায়, ‘‘এখানকার মানুষের রুটি রুজির জন্য ইটভাটা এবং মেছোভেড়ির প্রয়োজন। বাঁধ ঠিকমতো না দেওয়া হলে নোনা জল ঢুকে সব নষ্ট করে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন মাছ চাষিরা।’’ পঞ্চায়েত সদস্য কেনায়েত মিস্ত্রি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে মাটি কাটার যন্ত্র আনতে হবে। না হলে বাঁধের কাজ শেষ হবে না।’’ভাতের থালা হাতে রনজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ঝড়ে ঘর ভেঙেছে তাই স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাঁধের উপর টোঙের তলায় থাকছি। পঞ্চায়েত দিয়েছে চিঁড়ে, গুড়। বেসরকারি ভাবে ত্রাণ দেওয়ায় দু’টো ভাত খেতে পাচ্ছি।’’ একই দাবি করেন স্থানীয় আব্দুর রহিম গাজি, অলিউল কারিগর, কমল মণ্ডল, ইমজামামুল গাইন বলেন, ‘‘বাঁধ বাঁধা নিয়ে গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। ফলে বাঁধে মাটি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার ফলে মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। তা ছাড়া ইটভাটার কাটা খালে এবং মেছোভেড়িতে জল ঢোকানোর জন্য যদি কংক্রিটের বাঁধ করা হত তা হলে আজকে আর হাজার হাজার মানুষকে এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হত না।’’ ফেরার পথে একটা চিৎকার কানে আসে। বলা হচ্ছিল ‘মন্ত্রী’ আসছে ত্রাণ দিতে। আপনারা আসুন নদীর ধারে।