পরিদর্শন: এলেন সেচমন্ত্রী— নিজস্ব চিত্র
লঞ্চে চেপেই বৃহস্পতিবার পাথরপ্রতিমায় ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করলেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বাঁধ পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী লঞ্চ থেকে না নামায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও।
আমপানের জেরে পাথরপ্রতিমা ব্লকের বিভিন্ন নদী ও সমুদ্রবাঁধ তছনছ হয়ে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। নোনা জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও পুকুর। সামনেই পূর্ণিমার কোটাল। ভরা কোটালের জোয়ারের জল ঢুকে ফের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন এলাকা পরিদর্শনে আসেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। হেলিকপ্টারে এসে দুপুর ১টা নাগাদ পাথরপ্রতিমা কলেজের সামনের মাঠে তৈরি হেলিপ্যাডে নামেন তিনি। সেখান থেকে পাথরপ্রতিমা ঘাটে যান। ঘাট থেকে লঞ্চে করে গোপালনগর পঞ্চায়েতের উত্তর গোপালনগর গ্রামের কাছে নদীবাঁধ দেখতে চলে যান। বাঁধের উপরে অপেক্ষা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদল। তবে লঞ্চ থেকে নামেননি মন্ত্রী। হাত নেড়ে ফিরে আসেন পাথরপ্রতিমা ঘাটে। সেখান থেকে কপ্টারে করে ফিরে যান।
মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নদীবাঁধের পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। সেচ দফতর ও পঞ্চায়েত থেকে এই ক’দিনের মধ্যেই ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলি তৈরি করে ফেলেছে। আপাতত সামনের পূর্ণিমার কোটালের জল আটকানো যাবে। সুন্দরবন এলাকা জুড়ে আমপানের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পাকাপাকি ভাবে তৈরি করতে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দল আগামীকাল শুক্রবার আসছে। তারা বাঁধ দেখার পরে পরিকল্পনা করা হবে।” কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বাঁধ দেখতে এসে বাঁধে না নেমে দূর থেকে দেখে চলে যাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘আমরা বাঁধের পরিস্থিতির কথা জানাব বলে তৈরি ছিলাম। কিন্তু মন্ত্রী তো নামলেনই না। সরাসরি কথা বলতে পারলাম না।’’
ওই এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুনির্মল দাসের দাবি, বাঁধে নামলে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে এই আশঙ্কা থেকেই মন্ত্রী নামেননি। তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হেলিকপ্টারে এসে লঞ্চে করে ঘুরে মন্ত্রী চলে গেলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানুষরা এটা মানতে পারছেন না।”
এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। সমীর বলেন, “বিজেপি মানুষের ধারে কাছে যায় না। আড়ালে থেকে শুধু নোংরা রাজনীতি করে। ওই এলাকায় আমি আগে গিয়েছিলাম। মানুষের সমস্যার শুনেছি এবং সমাধানেরও ব্যবস্থা করেছি। সুতরাং মানুষ মন্ত্রীর সামনে কোনও ক্ষোভ দেখাতেন না। তা ছাড়া, মন্ত্রীর আরও কয়েক জায়গায় নদীবাঁধ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। তাই তিনি দ্রুত ফিরে আসেন।”
এ দিন সন্দেশখালিতেও নদী বাঁধ পরিদর্শনে এসেছিলেন শুভেন্দু। সন্দেশখালির ধামাখালি থেকে লঞ্চে ওঠেন। রায়মঙ্গল, বড় কলাগাছি সহ একাধিক নদী পথ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সন্দেশখালি, মণিপুর, আতাপুর, তুষখালি সহ বিভিন্ন এলাকার নদী বাঁধ ঘুরে দেখেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতো এবং সেচ দফতরের আধিকারিক, ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।
মন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকার প্রতি রাজ্য সরকারের নজর আছে। তাঁর কথায়, ‘‘সুন্দরবন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভাবছেন। সুন্দরবন এলাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে বাঁধের কাজ করার জন্য সেচ দফতরের কী কী করা দরকার, পরিকল্পনা করে মুখ্য সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এই এলাকার স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা আশা করব কেন্দ্র সরকারের বাস্তব উপলব্ধি দেখে এগিয়ে আসা উচিত। কেন্দ্রীয় দল আসছে। আমরা আশাবাদী।’’ এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার থাকাকালীন সন্দেশখালি বিভিন্ন এলাকায় কংক্রিটের নদী বাঁধের পরিকল্পনা করে ছিলেন তৎকালীন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে সেই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। কেন্দ্র সরকার কাজের থেকে বেশি ভাষণ দিচ্ছে।’’