বাঁধ চুঁইয়ে ঢুকছে জল
Cyclone Amphan

ভরা কোটালে ভয়

আগামী তিন দিন জল আরও বাড়বে। ফলে এই বাঁধ যে সেই জলের চাপ ধরে রাখতে পারবে না, তা এক প্রকার ধরেই নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৬:১১
Share:

বাঁধের মাটি কেটেই ফেলা হচ্ছিল বাঁধে। জানতে পেরে আটকানো হয়, দাবি সেচ দফতরের। ছবি: দিলীপ নস্কর

আমপানের জেরে মাতলা নদীর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ক্যানিংয়ের মধুখালি গ্রামে। বহু জায়গায় ভাঙনের ফলে প্লাবিত হয়েছিল একের পর এক গ্রাম। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল সেখানে বাঁধ মেরামতির কাজ করছে সেচ দফতর। গ্রামের মানুষজনকে কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে মাটির বস্তা ফেলে নদীর জল আটকানোর চেষ্টা চলছে। এ দিকে, কোটালের জেরে নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। দেখা গেল, মেরামত করা জায়গা দিয়েও সেই জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে। আগামী তিন দিন জল আরও বাড়বে। ফলে এই বাঁধ যে সেই জলের চাপ ধরে রাখতে পারবে না, তা এক প্রকার ধরেই নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

ক্যানিং মহকুমা সেচ দফতরের আধিকারিক সুরজিৎ লাহিড়ি অবশ্য বলেন, “জোরকদমে কাজ চলছে। মানুষের পাশাপাশি যন্ত্র দিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, কোটালের জল আটকে দেওয়া সম্ভব হবে। তবুও কোথাও যদি বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটে, তা হলে তা দ্রুত মেরামতির জন্য কর্মী ও সব ধরনের সরঞ্জাম মজুত রাখা হচ্ছে।”

পাথরপ্রতিমার ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর। গত কয়েক দিন ধরেই উ্তর গোপালপুরে বাঁধের মাটি কেটেই বাঁধ মেরামতের কাজ চলছিল একাধিক জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এতে আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বাঁধ। ফলে পূর্ণিমার কোটালে ফের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে কাকদ্বীপ মহকুমার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র কল্যাণ দে বলেন, “বিষয়টি জানার পরেই ওই ভাবে কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি কোটালের জল আটকে দেওয়া যাবে।”

Advertisement

সামনেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল। তার আগে আমপানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত কুলতলি, ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা, সাগরের নদীবাঁধগুলি মেরামত করা হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে। কিন্তু এই বাঁধ আদৌ কোটালের জল রুখতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, বাঁধ ভাঙার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ে বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও সরু সুতোর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঁধ। পূর্ণিমার কোটালে সেই সব বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত হওয়া ভাঙা নদীবাঁধগুলিও কোটালের মুখে দাঁড়াতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে বাসিন্দারা। খোদ সরকারি আধিকারিকেরাও এ ব্যাপারে আশার কথা শোনাতে পারছেন না।

বহু জায়গায় বাঁধ মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলেও অভিযোগ। গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “এত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেচ দফতরের একার পক্ষে সেই বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়। তাই পঞ্চায়েতগুলিকেও বাঁধ মেরামতের কাজ করতে বলা হয়েছে।”

কিন্তু এত কম সময়ে বাঁধ মেরামতির কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানেরা। আমতলি পঞ্চায়েত প্রধান রঞ্জন মণ্ডল, রাঙাবেলিয়া পঞ্চায়েত প্রধান ভারতী গায়েনরা বলেন, “পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোটালের আগে সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মেরামত করা সম্ভব নয়।”

সব মিলিয়ে কোটালে জেলা জুড়ে কয়েক হাজার মানুষের নতুন করে বিপদে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement