নিরুপায়: এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে মনিরুলকে। নিজস্ব চিত্র
গাছের উপরে মাচা তৈরি করে কেউ বাস করছেন। আবার কেউ রাস্তায় পলিথিনের তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন। আমপানের এক মাস পরেও এমন ছবি দেখা যাচ্ছে হাসনাবাদের পাটলিখানপুর অঞ্চলের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
ওই এলাকার মানুষের কথায়, ‘‘বাঁধ ভাঙা নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে পড়ায় ফসল শেষ হয়ে গিয়েছে। নিচু জমিতে জমে থাকা নোংরা নোনা জলে গাছ, পাতা, মৃত পশুর দেহ পড়ে থাকায় জল দূষিত হয়েছে। খাল, বিল, পুকুর, পানীয় জলের কলের অবস্থাও ভাল নয়। মাটির তলায় থাকা পাইপের মধ্যে বিষাক্ত জল ঢুকে পড়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে পানীয় জলের। তাই এখন বৃষ্টির জলই একমাত্র ভরসা প্লাবিত এলাকার মানুষের।’’ স্বপন মণ্ডল, প্রতিমা আঢ্য, কমল দাসের কথায়, ‘‘চাষের জমিতে জল জমে রয়েছে। মাছ ধরে কোনও রকমে দিন কাটছে এলাকার মানুষের।’’
গাছের উপরে বাঁশের মাচায় ঘর বেঁধে বাস করছেন মনিরুল গাজি। শিরিষ গাছের ডালের উপরে বাঁশ, পলিথিন, বস্তা দিয়ে মাথা গোঁজার আস্তানা তৈরি করেছেন মনিরুল। বাঁশ ও দড়ির সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নীচে নামেন খাবার সংগ্রহ করতে। আবার ওই পথেই গাছের মাথায় গিয়ে ওঠেন। মনিরুলের কথায়, ‘‘নদীর বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকায় বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। তাই গাছের উপরে বাসা তৈরি করেছি।’’ বাঁধ ভেঙে জল ঢুকলেও আর তাঁর বাড়ি ভাসাতে পারবে না। নোংরা জল কাদাও মাখতে হবে না তাঁকে। এমন গাছ পেলে তাঁর মতো অনেকেই এমন উচুঁতে ঘর বাঁধতেন বলে জানান তিনি।
দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর ইঞ্জিনভ্যানের উপরে পলিথিন টাঙিয়ে ঘর বেঁধেছেন খাদিজা বিবি। লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ ছিল। তার উপরে নদী বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে বন্ধ ধান, পাটের চাষও। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ। এখন চাষের জমিতে জমা জলে মাছ ধরে কোনও রকমে সংসার চলে। বাড়ির ঠিকানা বলতে ভ্যান।
ঘর ভেসেছে জলে। এখন কোনও রকমে রাস্তার উপরে থাকেন কৃষ্ণকান্ত মণ্ডল, ফজের আলিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘সরকারি ত্রাণ বলতে মাত্র এক খানা পলিথিন পেয়েছিলাম। মেলেনি ঘর ভাঙার আর্থিক সাহায্য। বেসরকারি ত্রাণের উপরে নির্ভর করেই ছিলাম। কিন্তু গ্রামে ত্রাণ লুট হওয়ায় এখন কেউ এখানে আসতে চাইছেন না।’’ ভেটকি মাছের বাচ্চা ৫-১০ টাকায় বিক্রি করে কোনও রকমে দিন চলছে তাঁদের। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এখন জাল নিয়ে মাঠে জমা জলে নদী থেকে ঢুকে পড়া মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন।
হাসনাবাদ ব্লকের পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান পারুল গাজির স্বামী আব্দুর রহিম গাজি বলেন, ‘‘বাঁধ ভাঙার পরে রাস্তার পাশে আমরা পলিথিন দিয়ে ঘর করে দিয়েছিলাম। প্লাবিত এলাকার মানুষ সেখানে থাকতেন। বাঁধ বাঁধার পরে এখন জল শুকিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তবে গাছে বাস করার কথা ঠিক নয়। গাছে পাখির বাসা করা ছিল। কেউ সেখানে উঠতে পারে কিন্তু বাস করার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলেরই কেনায়েত মিস্ত্রি অবশ্য বলেন, ‘‘বাঁধ ভাঙার পরে গাছের উপর বাস করার কথা শুনেছি।। পঞ্চায়েত থেকে ৩-৪ দিন সরকারি ভাবে ত্রাণ দিলেও তা অনেক দিন বন্ধ। বেসরকারি ত্রাণও মিলছে না। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মানুষকে রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে। পচা জলে রোগবালাই হচ্ছে। অথচ আমার এলাকার ৫৫০ পরিবারের জন্য মাত্র ১৫০টি পলিথিন দেওয়া হয়েছে।’’