মরার উপর নোটের ঘা!
একে তো শোকে বিহ্বল শ্মশানযাত্রী। তার উপরে শেষকৃত্যে এসে নোট নিয়ে হেনস্থার শিকার তাঁরা।
গত কয়েক দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলছে মন্দিরবাজার পঞ্চায়েত সমিতির অধীন দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানে। ৫০০-১০০০ টাকার নোট এখনও নিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্মশান কর্তৃপক্ষ। মুখে বলতেই হচ্ছে, ১০০ টাকার নোট দিন। কিন্তু একে তো আত্মীয়-পরিজন বিয়োগের বেদনা, তার উপরে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছনোর নানা ঝক্কি সামলে শ্মশানযাত্রীদের কারও খেয়াল থাকছে না, খরচ মিটাতে হবে ১০০ টাকার নোটেই। ফলে ৫০০-১০০০ টাকার নোটই হাতে ধরাচ্ছেন তাঁরা। বিড়ম্বনায় পড়লেও মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্মশান কর্তৃপক্ষ। তাঁদের শবদাহের খরচ বাবদ প্রাপ্য ৮০০ টাকা। মৃতের আত্মীয়-পরিজনের অবস্থা দেখে বিশেষ উচ্চবাচ্য করছেন না তাঁরা।
কথা হচ্ছিল বেহালা থেকে আসা এক শ্মশানযাত্রীর সঙ্গে। তিনি এসেছেন এক বয়স্ক আত্মীয়ের দেহ নিয়ে। সঙ্গে থাকা অন্যদের সঙ্গে মৃদু কথা কাটাকাটি হচ্ছিল কাউন্টারে। ওই শ্মশানযাত্রী পিছনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘তা়ড়াহুড়োয় কারও মনেই ছিল না, একশো টাকার নোট আনার ব্যাপারে।’’ শেষমেশ কয়েকজন আত্মীয় মিলে একশো টাকার নোটে ৮০০ টাকা জোগাড় করে শ্মশানের কাউন্টারে জমা করলেন।
মন্দিরবাজারের এক ব্যক্তি এসেছিলেন পাড়ার একজনের শবদাহ করতে। মৃতের ছেলেমেয়েরা কেঁদে ভাসাচ্ছিলেন। বাকি আত্মীয়-পরিজন, পড়শিরা তাঁদের সামলাতেই ব্যস্ত। হাসপাতালে খরচ খুচরোয় মেটাতে হয়েছে বলে জানা গেল। সেখানেও নাকি ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিতে চাননি কর্তৃপক্ষ। ওই শ্মশানযাত্রীর কথায়, ‘‘শেষযাত্রাতেও এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, ভাবতে পারিনি। এ তো দেখছি, মরেও শান্তি নেই!’’
শ্মশানের দায়িত্বে থাকা উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়য় জানালেন, দিনরাত ধরে যত দেহ আসছে, সকলেই প্রায় ১০০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিচ্ছে। খুচরো ফেরত দিতে সমস্যা হচ্ছে। কদ্দিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, কে জানে! জানা গেল, গড়ে ৮-১০টি দেহ আসে এখানে।
এ দিন দুপুরে শবদেহ নিয়ে আসা এক যাত্রী বললেন, ‘‘দেহ বাড়ি থেকে শ্মশানে আনতে গাড়ি ভাড়া ছাড়াও খাট-ফুল ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র কেনা বাবদ ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ব্যাঙ্কে বা এটিএমে গিয়েও টাকা মিলছে না। কোনও রকমে সব সামলেছি। শ্মশানে এসেও এই পরিস্থিতি হবে, মাথাতেই ছিল না।’’