—প্রতীকী চিত্র।
সময় যত গড়াচ্ছে, জেলবন্দিদের ‘লড়াইয়ের’ উত্তাপও তত বাড়ছে ব্যারাকপুর সংশোধনাগারে। বন্দিদের কেউ হাতে ব্যাট নিয়ে তৈরি। কারও নজর উইকেটে। এমনকি, কারারক্ষীদের একাংশও জড়িয়ে পড়েছেন সেই লড়াইয়ে। মাঝেমধ্যেই ‘মার মার’ শব্দে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে জেল চত্বরে। ঘটনাক্রমের দিকে সতর্ক নজর রাখছেন কারা কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁদের দাবি, এই লড়াই নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। কারণ, এতে রক্ত ঝরার আশঙ্কা নেই। তবে, এই শীতেও লড়াইয়ে অবতীর্ণ খেলোয়াড়দের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে।
ব্যারাকপুর জেলে শুরু হয়েছে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। মজা করে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিজেসিএল’ (ব্যারাকপুর জেল ক্রিকেট লিগ)। যোগ দিয়েছে ন’টি দল। সেগুলির নামকরণ প্রক্রিয়াতেও রয়েছে অভিনবত্ব। যেমন, একটি দলের নাম বেঙ্গল টাইগার জায়েন্টস। রয়েছে নিউ ইয়ং সোসাইটি, নেশন ইন্ডিয়া, ভোজপুরি দাবাং, টিম এক্সপেন্ডেবল।
কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, খেলোয়াড়দের অনেকেই চার দেওয়ালের বাইরে কুখ্যাত অপরাধী বলে পরিচিত। তাঁদের কেউ জেলে এসেছেন খুনের অভিযোগে, কেউ এসেছেন অপহরণ বা মাদক পাচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ‘ত্রাস’ নামে পরিচিত কয়েক জন দুষ্কৃতীও রয়েছেন এই সংশোধনাগারে। তাঁদের অনেকেই ব্যাট-বল হাতে বাইশ গজের ক্রিকেট-যুদ্ধে নেমেছেন।
টুর্নামেন্টে রয়েছে কারারক্ষীদের নিয়ে একটি দলও। ইতিমধ্যে একটি খেলায় জিতেছে দলটি। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ‘ওয়ার্ম আপ’ ম্যাচ খেলেছে দলগুলি। পয়লা জানুয়ারি শুরু হয়েছে মূল পর্বের খেলা। আম্পায়ারের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে প্রবীণ চার কারারক্ষীকে।
এক জেল আধিকারিক বলেন, ‘‘লটারির মাধ্যমে বন্দিদের ন’টি দল তৈরি করে দিয়েছেন জেল সুপার অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রতি দলে রয়েছেন আট জন খেলোয়াড়। চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে চলছে খেলা। আট ওভারের প্রতিযোগিতার ফাইনাল হবে ২৬ জানুয়ারি। সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার ও ফিল্ডারকে পুরস্কৃত করা হবে। পুরস্কার পাবেন চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের খেলোয়াড়েরা।’’
প্রতিযোগিতা চলাকালীন অনেকে জামিনে মুক্তি পেতে পারেন, সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে প্রতি দলে দু’জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় রাখা হয়েছে। এই জেলে মূলত বিচারাধীন বন্দিদেরই রাখা হয়। এক জেল আধিকারিক বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হল, বন্দিদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করা, যাতে তাঁরা জেলে থাকাকালীন গোলমালে জড়িয়ে না পড়েন। কারারক্ষীদের সঙ্গে বন্দিদের সম্পর্কও ভাল থাকা প্রয়োজন। সে কারণে প্রতিযোগিতায় রয়েছে কারারক্ষীদের একটি দলও।’’
কারা দফতর সূত্রের খবর, প্রতিযোগিতা ঘিরে উত্তেজনা এখন এমন পর্যায়ে যে, প্রতিপক্ষকে দেখলে ‘খেলা হবে’ স্লোগানে দিচ্ছেন খেলোয়াড়েরা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখানে মূলত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুষ্কৃতীদের রাখা হয়। জেলে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও বন্দিদের সংশোধন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে। সেই কারণেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি।’’