ভয়াবহ: নৈহাটিতে বিস্ফোরণের মুহূর্ত। ফাইল চিত্র
নৈহাটিতে বৃহস্পতিবার যে ভাবে গঙ্গার ধারে নিয়ে গিয়ে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈজ্ঞানিক এবং আইনের পরিপন্থী। কারণ, এ ভাবে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করলে সমস্ত বিপজ্জনক বর্জ্য গঙ্গার জলে যাবে এবং তা কলুষিত হবে।
কলকাতা হাইকোর্ট ১৯৯৬ সালে শব্দবাজি নিষিদ্ধ করে। তারপরেই পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বাজেয়াপ্ত করা আতসবাজি এবং শব্দবাজি কী ভাবে নষ্ট করা হবে, এ ব্যাপারে একটি রূপরেখা তৈরি করে। যদিও সেই সময় সর্বভারতীয় স্তরে বিশেষ কোনও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ছিল না। দু’ধরনের বাজিই যে সব জিনিসে তৈরি হয়, তার সমস্ত উপকরণই বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে চিহ্নিত।
পরবর্তী ক্ষেত্রে হলদিয়াতে বিপজ্জনক বর্জ্য জমা রাখার জন্য এবং নষ্ট করার জন্য সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞান-ভিত্তিক একটি স্থান নির্দিষ্ট করা হয়। সেই নির্দিষ্ট স্থানেই সমস্ত ধরনের বিপজ্জনক বর্জ্য ফেলার অনুমতি দেয় পর্ষদ। বলা হয়, সব কল-কারখানা বর্জ্য এবং বাজেয়াপ্ত করা আতসবাজিকে হলদিয়ার ওই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যেই নিয়ে যেতে হবে। এর ভিত্তিতে পর্ষদ সুনির্দিষ্ট ভাবে পুলিশকেও নির্দেশ হয়। কিন্তু এরপরেও দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু জায়গার বাজেয়াপ্ত বাজি যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে এবং তার ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আতসবাজি কিংবা শব্দবাজিতে যে উপকরণ দেওয়া হয়, তা মাটিতে বা জলে মিশলে যথেষ্ট দূষণ হয় এবং তা মানুষ এবং জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত হানিকর।
২০১৯ সালে চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে রাজ্য পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট ভাবে অনুরোধ করা হয়, যাতে যত্রতত্র বাজেয়াপ্ত বাজি না-ফেলে পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী হলদিয়ায় পাঠানো হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য পরিবেশ দফতর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।সেই অনুযায়ী পর্ষদ রাজ্য ও কলকাতা পুলিশকে বাজি নষ্ট করার বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো সম্পর্কে অবহিতও করে।
পর্ষদ চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমিকে যে চিঠির উত্তর দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র কলকাতা পুলিশই ২০১৯ সালে ১১০০ কেজি বাজি হলদিয়ার বিপজ্জনক বর্জ্য শোধনাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু অন্য জেলা কী ভাবে এটা করল, তার কোনও হিসেব পর্ষদের কাছে আছে বলে আমাদের জানা নেই। বহু সময়েই সংবাদপত্রে ছবি বেরিয়েছে, পুলিশ উন্মুক্ত মাঠে বাজি নিষ্ক্রিয় করছে। যা আইনত এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে সঠিক নয়।
নৈহাটির ক্ষেত্রে চিন্তার ব্যাপার, যে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল, তা আতসবাজি, শব্দবাজি না অন্য কিছু— তা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। সম্ভবত যাঁরা এটা করছিলেন, তাঁরা এই বিষয়টি চিন্তার মধ্যে আনেননি। সমস্ত বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক। যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার, যে সমস্ত পুলিশকর্মী এটাকে নিষ্ক্রিয় করছিলেন অবৈজ্ঞানিক ভাবে, তাঁদেরও জীবনহানি ঘটতে পারত।
সুতরাং, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার পরিবেশের স্বার্থে, জীবনের স্বার্থে।
(লেখক রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি আধিকারিক)