চলছে লালারস সংগ্রহের কাজ। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হাবড়া শহরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির মৃত্যু হল। হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৪ বছরের ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে শহরে এ পর্যন্ত মৃত্যু হল ৬ জন করোনা আক্রান্তের।
হাবড়া শহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রায় রোজই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২০০ ছাড়িয়েছে। অথচ এখনও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘোরাঘুরি চলছে। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। লালারস পরীক্ষা করছেন না অনেকে। জ্বর, সর্দি-কাশি হলে বাড়িতে ওষুধ খাচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে হাবড়া শহরের বাসিন্দা ৪২ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিন-চার দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। অথচ হাসপাতালে বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেননি। বাড়িতে নিজেই ওষুধ খাচ্ছিলেন। বুধবার সকালে অসুস্থতা বাড়ে। জ্ঞান হারান। পুরসভা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান। হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির দেহ ময়নাতদন্ত করা হবে।’’ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে হাত-পা স্যানিটাইজ় করতে বলা হচ্ছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে এসে লালারস পরীক্ষা করতে মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে। এরপরেও কিছু মানুষ সচেতন হচ্ছে না। হাবড়ার পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘বুধবার পর্যন্ত শহরে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০৬ জন। মারা গিয়েছেন ৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১৩ জন। হাসপাতাল, সেফহোম এবং হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৭ জন।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বাণীপুর এলাকায় চালু হয়েছে ৫০ শয্যার সেফহোম। করোনা-আক্রান্ত যাঁদের উপসর্গ নেই, তাঁরা ওই সেফহোমে থাকতে পারবেন। ইতিমধ্যেই দু’জন আক্রান্তকে এখানে রাখা হয়েছে। সেফহোমে পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা পাঁচটি ওয়ার্ড রয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। প্রয়োজনে চিকিৎসক, নার্সরা সাউন্ড সিস্টেমে রোগীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। রোগীদের জন্য টিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নীলিমেশ জানিয়েছেন, পুরসভার চিকিৎসক, নার্স অ্যাম্বুল্যান্স চালক, গ্রুপ ডি কর্মী, জীবাণুমুক্ত কর্মী— যাঁরা সামনে থেকে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিকা করছেন তাঁদের প্রত্যেকের জন্য জন্য ১০ লক্ষ টাকার সাধারণ বিমা এবং ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা করে দেওয়া হয়েছে। করোনা রোগীকে যে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা বহন করছেন এবং যাঁরা আক্রান্তের বাড়ি জীবাণুমুক্ত করছেন, তাঁদের অতিরিক্ত সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক।