পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজস্ব আদায়ের সব টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়ে না বলে অভিযোগ তুলেছেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরগুলিতে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার। আজ, উত্তর ২৪ পরগনা।
Land

Corruption: একের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ

২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বনগাঁ ব্লকে রাজস্ব জমা পড়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ ০৬:১২
Share:

প্রতিবাদ জানিয়ে বাদুড়িয়ার এই পুকুর ভরাট বন্ধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফাইল চিত্র।

বনগাঁ ব্লকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে রাজস্ব আদায় অনেকটাই বেড়েছে। আগের তুলনায় এই আয় বেশি। পুরোটাই সরকারের ঘরে জমা পড়েছে বলে দাবি দফতরের কর্তাদের। রাজস্ব আদায়ের টাকা এখন অনলাইনে জমা করেন মানুষ। ফলে টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়তে বাধ্য বলে দাবি তাঁদের।

Advertisement

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বনগাঁ ব্লকে রাজস্ব জমা পড়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব এসেছে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। পরিমাণ বেড়েছে। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক লেনদেন কম হয়েছিল। ফলে আগামী দিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়বে বলে আশা দফতরের কর্তাদের।

দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ ব্লকে ১৬টি ইট ভাটা আছে। তারা নিয়মিত খাজনা দেয়। তা ছাড়া, বসতবাড়ি, পুকুর থেকেও খাজনা আসে। দফতরের কর্তারা অবৈধমাটি খাদানে অভিযান চালিয়ে ৩৯ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন।

Advertisement

তবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বনগাঁ ব্লকে কিছু সমস্যা আছে। কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকার কৃষি জমি থেকে খাজনা আদায় মুকুব করে দিয়েছে। কৃষিপ্রধান এই এলাকা থেকে আগে প্রায় ১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হত। সেই আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্লক এলাকায় বেশির ভাগ দোকানপাট সরকারি জমিতে হওয়ায় সেখান থেকে খাজনা আদায় করা যায় না।

বাড়ি ও পুকুর থেকে খাজনা আদায়ের বিষয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বলেন, “বসতবাড়ি, পুকুরের মতো বিষয় থেকে খাজনা না পেলে আমরা নোটিস দিতে পারি। এর বাইরে আর কোনও আইনি পদক্ষেপ করতে পারি না।” এর ফাঁক গলে অনেকেই বাড়ির খাজনা দেন না বলে অভিযোগ। ফলে রাজস্ব আদায় এখানে তুলনায় কম।

বনগাঁ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মানবকুমার দাস বলেন, “ব্লকে কিছু চিরুনি কারখানা এবং প্লাইউড কারখানা ছাড়া শিল্প নেই। শিল্প ছাড়া রাজস্ব আদায় খুব বেশি বাড়া সম্ভব নয়।”

অতীতে দফতরে অভিযোগের পাহাড় জমলেও এখন মাত্র ২৯টি অভিযোগ জমা আছে বলে দফতর সূত্রের খবর। নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন। মূলত মিউটেশন (নামপত্তন) সংক্রান্ত অভিযোগ বেশি। কেউ হয় তো জমি কিনেছেন, ১০ শতক। কেনার সময়ে দেখে নেননি, জমির মালিকের রেকর্ড আছে ৫ শতক। পরবর্তী সময়ে ক্রেতা রেকর্ড করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। অফিসে আসা লোকজন জানালেন, আগে দালালের খপ্পরে পড়তে হলেও এখন সরাসরি কাজ করা যায়।

বসিরহাট অঞ্চলে রেজিস্ট্রি অফিসে অর্থ খরচ করলে একজনের জমি আর একজনের নামে অনায়াসেই রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। কখনও অর্থের বিনিময়ে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে, কখনও চাষের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। কোথাও রেজিস্ট্রি অফিসের দালালদের সহযোগিতায় নকল বংশপঞ্জি তৈরি করে ভাইকে ফাঁকি দিয়ে অন্য এক ভাই নিজের নামে জমি করিয়ে নিচ্ছে। একই ভাবে কোথাও রেকর্ডে থাকা জলাশয় রাতারাতি বাস্তু জমিতে পরিণত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বসিরহাটের বাসিন্দা স্বপন চন্দ্র, ফজের গাজিরা জানালেন, গত কয়েক বছরে বসিরহাট শহরে থাকা অন্তত ২০টি পুকুর রাতারাতি কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাস্তু জমিতে পরিণত হয়েছে। সেই জমি বেআইনি ভাবে কাটা মাটি ফেলে ভরাট করে তৈরি হয়েছে বাড়ি-দোকান। অভিযোগ, সবই হয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং রেজিস্ট্রি অফিসের ‘বদান্যতায়।’

বাদুড়িয়ার কিছু বাসিন্দার দাবি, প্রাচীন পুকুর-লাগোয়া মন্দিরে প্রতি বছর উৎসব হয়। সেই পুকুর মাটি ফেলে দখল করার সময়ে মহিলারা প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধ করে দেন। সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় গত অর্থবর্ষে অনেকটাই কমেছে বলে জানাচ্ছেন বসিরহাটের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্মী। (চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement