Coronavirus

জীবনের চাকাও থেমে গিয়েছে পরিবহণকর্মীদের

নোটবন্দি ও জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প কারখানাগুলির। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের ক্রমশ দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে। কেমন আছে জেলার ছোট শিল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শ্রমিক-মালিকের জীবন। খোঁজ নিল আনন্দবাজার বনগাঁর ট্রাক পরিবহণ ব্যবসার বেশির ভাগটাই নির্ভরশীল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে চলা বাংলাদেশের সঙ্গে চলা বাণিজ্যের উপরে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৭
Share:

ছবি পিটিআই।

বাংলাদেশের সঙ্গে এ দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেড় বছর ধরে ধুঁকছিলই বনগাঁর ট্রাক পরিবহণ ব্যবসা। নোটবন্দি, জিএসটি-জাত আর্থিক মন্দার প্রভাব তো ছিলই। এ বার দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন শুরুর পর থেকে বনগাঁর পরিবহণ ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ল। ট্রাক ও ট্রাক পরিবহণ শ্রমিকদের (চালক খালাসি, হেল্পার)রুজিরোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

বনগাঁর ট্রাক পরিবহণ ব্যবসার বেশির ভাগটাই নির্ভরশীল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে চলা বাংলাদেশের সঙ্গে চলা বাণিজ্যের উপরে। ট্রাকে করেই দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। লকডাউন পরিস্থিতিতে এখন তা কার্যত বন্ধ। বনগাঁ মহকুমায় উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প-কারখানা নেই। এখানকার অর্থনীতির অনেকটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রান্সপোর্ট বা ট্রাক পরিবহণ ব্যবসার উপরেই। বনগাঁ মহকুমায় কয়েক হাজার ট্রাক মালিক রয়েছেন। ট্রাক-প্রতি কমবেশি গড়ে তিনজন করে শ্রমিক থাকেন। সব মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যাটা তাই দশ হাজারেরও বেশি। ট্রাক পরিবহণ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব মহকুমার অর্থনীতির উপরেও পড়তে শুরু করেছে।

বনগাঁর ট্রাক মালিকদের সংগঠন ‘সীমান্ত পরিবহণ মালিক সমিতি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দেড় বছর ধরেই বাংলাদেশে পণ্য রফতানির পরিমাণ কমে গিয়েছে। ট্রাকের পরিবর্তে অনেক পণ্য ইদানীং জাহাজেও রফতানি হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে ট্রাক পরিবহণ ব্যবসার হাল একটু-একটু করে খারাপই হচ্ছিল। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মালিকেরা ট্রাক কেনার কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি বলে ফাইনান্স সংস্থাগুলি প্রায় দেড়শো ট্রাক বাজেয়াপ্ত করেছে। সমিতির সম্পাদক অশোক দেবনাথ বলেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমায় চার হাজারের বেশি ট্রাক মালিক রয়েছেন। বনগাঁর প্রধান ব্যবসা এই ট্রাক পরিবহণ। কিন্তু লকডাউনের জেরে তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্রাক মালিকদের অবস্থা শোচনীয়। অনেকের খাওয়াও জুটছে না।’’ ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনে’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দিলীপ দাস বলেন, ‘‘ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় ট্রাক শ্রমিকেরা যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পণ্যভর্তি ট্রাক বিভিন্ন পার্কিং-এ দাড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে পণ্য খালি করে এখানকার অনেক ট্রাকও বেনাপোলে আটকে।’’

Advertisement

ক্ষতির বহর অবশ্য সহযোগী ক্ষেত্রগুলিতেও প্রকট। পণ্য রফতানি ও আমদানিকারীরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। ‘পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পণ্য নিয়ে ট্রাক বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দিন ধরে মালপত্র ট্রাকে পড়়ে নষ্ট হচ্ছে। লকডাউন ওঠার পরে বাংলাদেশের আমদানিকারীরা এই সব পণ্য নিতে অস্বীকার করতে পারে। এমনটা হলে ক্ষতির বহর বাড়বে। তা ছাড়া ট্রাক প্রতি রোজ পার্কিং ফি ১৪০০-১৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। সেটাও একটা বড় ক্ষতি। ফলে সব মিলিয়ে আর্থিক ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’’ তিনি আরও জানান, সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, যাবতীয় সুরক্ষা বজায় রেখে পার্কিং-এ থাকা পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলি বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement