অপেক্ষা: আপাতত শুধুই যন্ত্রপাতির ধুলো ঝাড়া কাজ। নিজস্ব চিত্র
বৈশাখের শুরু থেকে গোটা বাংলায় নানা পালাপার্বন হয়। তার মধ্যে বাঙালির আর এক বড় উৎসব, রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন। পাড়ায় পাড়ায় গান-বাজনা-নাচের আসর বসে। লকডাউনের জন্য সে সবই বন্ধ। এই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির। তার থেকেও বড় সমস্যায় পড়েছেন ডেকরেটর ব্যবসায়ীরা। নানা অনুষ্ঠানে মঞ্চ বাঁধেন এঁরা। চেয়ার-টেবিল দেন। আলো, শব্দ প্রক্ষেপণের জন্য ডাক পড়ে এঁদের। কিন্তু কোনও কাজই এখন হচ্ছে না।
বসিরহাট মহকুমায় হাজারখানেক মানুষ আছেন, যাঁরা আলো, শব্দ-সহ ডেকরেটরের আরও নানা সরঞ্জামের ব্যবসা করেন। তাদের সংস্থায় শ্রমিকের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর শব্দের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে শুরু হয়ে গেল লকডাউন। দোল উৎসব, চৈত্র সেল, বাসন্তী পুজো, রামনবমী, গঙ্গা পুজো, হনুমানজয়ন্তী, শিবরাত্রি, চড়ক তো বটেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নানা অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে। তার উপরে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তীর বরাতও এ বার পেলেন না এই ব্যবসায়ীরা। কর্মীদের ধরে রাখতে সামান্য টাকা দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু এ ভাবে বেশি দিন যে টানা যাবে না, তা বুঝতে পারছে শ্রমিক-মালিক দু’পক্ষই।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, বাপ্পা মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণ দাস, ছোটন অধিকারী, সোমনাথ নাথরা জানান, শ’পাঁচেক ভাড়া ছাড়তে হয়েছে তাঁদের। অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি। কর্মীদের পরিবারের অবস্থাও খারাপ।
বাপ্পার কথায়, ‘‘বৃষ্টিতে বাঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মণ্ডপ ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোথাও কোথাও বাঁশ বাঁধা হয়ে গিয়েছিল। তা খুলতেও পারছি না।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল সাউন্ড লাইট ভেন্ডরর্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মধুসূধন রায় বলেন, ‘‘ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম ধুলো পড়ে নষ্ট হতে চলেছে। সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। লকডাউন উঠলেও এই ব্যবসা চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। আনন্দ অনুষ্ঠানের জন্য এই পরিস্থিতিতে কে আর টাকা খরচ করবেন!’’ বসিরহাট সাউন্ড, লাইট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রশান্ত রায় জানালেন, লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে সরঞ্জাম কিনেছিলেন। গত চার মাস ধরে কোনও ভাড়া নেই। মালিক-কর্মীদের অনুদানের ব্যবস্থা করা হোক বলে সরকারের কাছে আর্জি তাঁদের।