শুরু হল চাষের কাজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
লকডাউনের কিছু ছাড়ে সুবিধা দেখছে কৃষিক্ষেত্র। তবে শিল্পের হাল কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
চাষিরা লকডাউনের মধ্যেই আনাজ তুলে বাজারে আনছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার থেকে তা কিছু কিছু মিলতে শুরু করেছে। তবে কলকারখানায় কাজ এ দিন বিশেষ হয়নি নানা কারণে। ফলতায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েকটি কারখানায় অবশ্য কাজ শুরু হয়েছে।
বসিরহাটে এ দিন সার-বীজ এবং কৃষি সরঞ্জামের দোকান খুলতে শুরু করে। যদিও সব দোকান এ দিন খোলেনি। বেলা বাড়তে সেই দোকানগুলিতে এ দিন ভিড়ও বাড়ে। বেশিরভাগই এসেছিলেন কীটনাশক কিনতে। মাঠে কীটনশক ছড়াতেও দেখা গিয়েছে।
ফুলের বাজার খোলার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রাজ্যের অন্যতম বড় ফুলের বাজার গাইঘাটার ঠাকুরনগর ফুলবাজার এ দিন বন্ধই ছিল।। ঠাকুরনগরের সচেতন বাসিন্দাদের দাবি মেনে কর্তৃপক্ষ বাজার বন্ধ রেখেছেন।
এত দিন বনগাঁর খেতখামারেও কাজ হতে দেখা গিয়েছে। কৃষি শ্রমিকেরা কাজে নেমে পড়েছেন কোথাও কোথাও। পশুখাদ্য সার-বীজের দোকান খুলেছে। তবে পশু খাদ্যের দোকানগুলিতে মালপত্রের জোগান কম ছিল।
হাসনাবাদ এবং হিঙ্গলগঞ্জে শুরু হয়েছে ১০০ দিনের কাজ। কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয় এমন প্রকল্পই শুরু হয়েছে। মূলত নার্সারি বা বাগানের কাজে শারীরিক দূরত্ব মেনে কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
এ দিন ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায় ১০০ দিনের কাজ কিছু কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে। তবে এক সঙ্গে প্রচুর মানুষ কাজ করেন, এমন প্রকল্পে কাজ করানো হয়নি। বরং ইন্ডিভিজুয়াল বেনিফিট স্কিমের মাধ্যমে ১০০ কাজ শুরু হয়েছে। ক্যানিং, বাসন্তী এলাকার ইটভাটাগুলিতে ও কাজ শুরু হয়েছে। ভাটা মালিকেরা জানিয়েছেন, অল্প অল্প শ্রমিক দিয়ে সরকারি নির্দেশ মেনেই কাজ শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার কোনও ইটভাটায় অশ্য কাজ শুরু হয়নি এ দিন। দিন কয়েক আগে হাসনাবাদে ইটভাটায় দুষ্কৃতীরা তোলা চেয়ে বোমাবাজি করেছিল। শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছেন ভাটা মালিকেরা। বসিরহাট মহকুমায় মোট ৫৬৯টি ইটভাটা রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি নির্দেশ তাঁদের হাতে না আসা পর্যন্ত তাঁরা কাজ শুরু করবেন না। এ দিন ব্যারাকপুরের চটকলগুলিও চালু করা যায়নি। মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে চটকল চালানো সম্ভব নয়। ফলতা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬টি কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে। ২০টি কারখানা খোলার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। শ্রমিকেরা আসতে না পারায় বাকি কারখানাগুলিতে উৎপাদন শুরু হয়নি।
এ দিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকে আগের থেকে কঠোর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। বসিরহাটের রাস্তায় নামেন পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই। অকারণে রাস্তায় ঘুরতে থাকা বাইক আরোহীদের দাঁড় করিয়ে সাবধান করেন সুপার। সোমবার হিঙ্গলগঞ্জ থানার পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করে লকডাউন অমান্য করার অপরাধে। রবিবার ও সোমবার মিলিয়ে মোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হিঙ্গলগঞ্জ থানার পুলিশ। বসিরহাট এবং হাবড়ায় থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয় বাজারে আসা জনতার।
ভিড় এড়াতে ডায়মন্ড হারবার শহরের মূল প্রবেশপথের বিভিন্ন জায়গায় গার্ডরেল বসিয়েছে পুলিশ। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজারের মাছ ও আনাজ বিক্রেতাদের একাংশকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের বাসস্ট্যান্ড ও রেল গেটের কাছে।
একই ভাবে সরিষাহাটের বাজার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল পাশের স্কুলের মাঠে। যথাযথ কারণ না দেখাতে পারলে বাইরের মোটরবাইক চালকদের এ দিন শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহরে ভিড় এড়াতে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে প্রবেশ পথ।