প্রতীকী ছবি
ছাড়পত্র পেয়েও চালু হল না চটকল। মালিকদের বক্তব্য, মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে মিল চালানো সম্ভব নয়। কাজের ধরণ অনুযায়ী, শারীরিক দূরত্ব বিধিও সব সময়ে মানা যায় না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্কের খরচ মালিক পক্ষ দেবেন কিনা, তা-ও স্পষ্ট হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কোনও চটকলেই কাজ হল না। শ্রমিকদের আর্থিক সুরাহা ফলে নতুন কর অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। শ্রমিক ইউনিয়নগুলি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের কাছে নিয়ম সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি জারির অনুরোধ জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণার সময়ে বলেছিলেন, যাতে শ্রমিকদের বেতন না কাটা হয়। পরে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকও নির্দেশ জারি করে, বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি দিতে হবে। ব্যারাকপুরের কয়েকটি চটকল শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া শুরু করেছিল। অল্প কিছু টাকা দেওয়ার পরে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু মিলে শ্রমিকদের কোনও টাকা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কয়েকটি বন্ধ মিলে শ্রমিকদের বকেয়া টাকাও মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ। তার ফলে চরম দূরবস্থার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের। চটকল চালু হওয়ার খবরে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু রবিবার শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, চটকল চালু হচ্ছে না। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পাকাপাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বা দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় ১০টি চটকল। আপাতত চালু রয়েছে ১৩টি চটকল। সব মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাও চটকলের উপরে নির্ভরশীল। মাসখানেক বন্ধ থাকায় কার্যত আঁধার নেমেছে তাঁদের ঘরে। অনেকের বাড়িতেই চাল-ডাল তলানির দিকে। আপাতত বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যক্তিগত সাহায্যে কোনও রকমে দিন কাটছে।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলি বলছে, স্বাস্থ্য ও শ্রম মন্ত্রক সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে বলেছে। অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, দস্তানা, মাস্ক পরা। কাজের আগে পরে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা। এখন প্রশ্ন হল, এ সব ব্যবস্থা কে করবে? মালিক পক্ষ এ বিষয়ে কিছু পরিষ্কার করেননি। শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার চটকল মালিকেরা নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করেন। সেখানে সকলেই জানান, মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে চটকল চালানো সম্ভব নয়। চটকলের সব বিভাগ মিলিয়ে একটি শিফটে এক হাজারের কাছাকাছি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। যদি কোনও কারখানায় তিন হাজার শ্রমিক থাকে, তা হলে মাত্র সাড়ে চারশো শ্রমিক দিয়ে মিল চালানো যাবে না।
সব সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন, সরকার বরং নির্দিষ্ট করে দিক, ক’টা শিফটে কাজ হবে। উৎপাদনের মাত্রাও বেঁধে কাজ হতে পারে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির আশঙ্কা, সুরক্ষা বিধি মেনে কাজ না করলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার আগে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। এত বেশি সংখ্যক শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা মুখের কথা নয়। ফলে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে সব পক্ষই।