জমায়েত: তৃণমূলের সমাবেশে মানুষের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড বিধি ভেঙে জমায়েতের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার কুলতলির সানকিজাহানে তৃণমূলের তরফে একটি যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক গণেশ মণ্ডল। অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। কোভিড পরিস্থিতিতে এই জমায়েত নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জমায়েতের উপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে সর্বাধিক পঞ্চাশ জনের জমায়েতের অনুমতি রয়েছে। তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে আরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলেরই দাবি, এ দিন প্রায় এক হাজার কর্মী সমর্থক বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে কারও কারও মাস্ক থাকলেও দূরত্ববিধির বালাই ছিল না। মঞ্চে বসা নেতাদের মধ্যেও দূরত্ববিধি চোখে পড়েনি।
রাজ্য জুড়ে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। সংক্রমণের নিরিখে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতি কয়েকদিন আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে বলে বারবার সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের এই কর্মসূচি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলার সভাপতি সুনিপ দাস বলেন, “হাজার জনের যোগদানের কথা বলা হলেও, আসলে অত লোক যোগ দেয়নি। তৃণমূল কয়েকজনকে জোর করে দলে টেনেছে। তবে এই পরিস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান করা একেবারেই উচিত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জমায়েত করতে বারণ করছেন। স্থানীয় নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর কথাও শুনছেন না। পুলিশ প্রশাসনের উচিত বিধায়কের বিরুদ্ধে মহামারি আইনে মামলা করা।” সিপিএম নেতা উদয় মণ্ডল বলেন, “এই পরিস্থিতিতে এরকম সভা একেবারেই কাম্য নয়। বিধায়ক সাধারণ মানুষকে মহামারির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।” বিধায়ক গণেশ মণ্ডল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসে অন্য দল থেকে বহু মানুষ তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। এ দিন বিজেপির প্রায় হাজার কর্মী যোগ দিয়েছেন। বিধি মেনেই অনুষ্ঠান হয়েছে। সকলেই মাস্ক ব্যবহার করেছেন। পর্যাপ্ত স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।” আগামী দিনেও এরকম যোগদান কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিধায়ক।
কয়েকদিন আগে কুলতলি ব্লক দফতরেই ইয়াস বিধ্বস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পরিবেশবান্ধব বাঁধের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশো স্থানীয় মানুষ। বিধি ভেঙে ব্লক দফতরে জমায়েত করায় বিডিওর তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলা করা হয়। ব্লক দফতরে সাধারণ মানুষের জমায়েতে মামলা হলে, রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে না কেন সেই প্রশ্ন তুলেছে এপিডিআর। এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর বলেন, “দুর্গতরা ব্লক দফতরে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে যাওয়ায় মামলা হয়েছে। সেখানে এত বড় একটা রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়ে প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ নেই। এই দ্বিচারিতার প্রতিবাদ করছি। সেই সঙ্গে আমাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
কুলতলির বিডিও বীরেন্দ্র অধিকারী বলেন, “তৃণমূলের অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”