বন্ধ রয়েছে এই ব্লাড ব্যাঙ্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
করোনা সংক্রমণ বনগাঁ মহকুমায় তীব্র হারে বাড়ছে । মৃত্যুর সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। এ দিকে, মহকুমায় বন্ধ রক্তদান শিবির। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মহকুমায় প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ রক্তের জন্য মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের উপরে নির্ভর করে থাকেন। মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ, চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পর্যন্ত আমাদের রক্ত মজুত আছে মাত্র ২১৭ ইউনিট। এই রক্ত দিয়ে সর্বোচ্চ দিন কুড়ি চলতে পারে। এ দিকে, মে মাসে আর কোনও রক্তদান শিবিরের বুকিং নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এ ভাবে চললে রক্তের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’ ব্লাডব্যাঙ্কে এ পজ়িটিভ রক্ত আছে ১৭ ইউনিট। অন্য নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের মজুতও কম।
ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসে এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়েছে। দু’টি শিবির থেকে ৭৯ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়েছে। গত বছর মে মাসে শিবির হয়েছিল ১৪টি। এ বার সেখানে শিবির দু’টি। এ বছর এপ্রিল মাসে শিবির থেকে ৯০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা গিয়েছিল বলে এখনও রক্ত সঙ্কট তৈরি হয়নি। কেন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন না উদ্যোক্তারা?
ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। তার ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর ফলে শিবিরের আয়োজন করতে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন। গত বছরও করোনা পরিস্থিতির সময়ে রক্তের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বুকিং করেও উদ্যোক্তারা একের পর এক শিবির বাতিল করেছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেক সংগঠন এগিয়ে এসেছিল। শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখে শিবিরের আয়েজন করা গিয়েছিল। ফলে গত বছর রক্তের ঘাটতি হয়নি।
কিন্তু এ বার করোনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। ফলে ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও রক্তদান শিবিরের আয়োজকদের শিবির করতে বলতে পারছেন না। উদ্যোক্তারাও যথেষ্ট সংখ্যক রক্তদাতা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রক্তদান শিবিরের আয়োজকেরা কেবলমাত্র রক্তদান শিবিরই আয়োজন করেন না। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বস্ত্রদান, স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা বস্ত্রদানের অনুষ্ঠানই তাঁদের কাছে মূখ্য। সঙ্গে থাকে রক্তদান শিবির। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা বস্ত্রদানের অনুষ্ঠানের সরকারি অনুমতি এখন প্রশাসন থেকে দেওয়া হচ্ছে না। সে কারণেও উদ্যোক্তারা শিবির বাতিল করছেন। তা ছাড়া, অন্য অনুষ্ঠান করলে মানুষের জমায়েত হবে। সেটাও উদ্যোক্তারা চাইছেন না।
এপ্রিল মাস পর্যন্ত বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে নিয়মিত ভাবে। এখন অবশ্য রক্তের অভাবে অন্যত্র রক্ত সরবরাহ করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ফোনে মানুষের কাছে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আবেদন করে বলছেন, আপনারা সরাসরি ব্লাডব্যাঙ্কে এসে রক্তদান করে যান। এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাঁদের আরও বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিবিরের আয়োজন করা সম্ভব। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরামর্শ দেওয়া হবে। কিন্তু শিবিরের সংখ্যা অবিলম্বে বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা।