নিয়ম-ভঙ্গ: চাঁপাডালি মোড়ের একটি নার্সিংহোমকে কোভিড হাসপাতাল না-করার দাবিতে দূরত্ব-বিধি না মেনেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয়েরা। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
‘‘করোনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না, মরার হলে ঘরে বসেও মরে যেতে পারি।’’ শুক্রবার বিকেলে রাস্তার মোড়ে বসে তাস খেলতে খেলতে বন্ধুদের এমনটাই বলছিলেন দত্তপুকুর থানার উলা এলাকার মফিজুল ইসলাম। তিনি কিংবা তাঁর আশপাশে কারও মুখেই মাস্ক নেই। দত্তপুকুর থানার উলা, বহেড়া, পূর্বাচল এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন হওয়া সত্ত্বেও নজরে এল না কোনও ব্যারিকেড। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, পুলিশ শুধু এসে দেখে চলে যাচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা এ দিন পর্যন্ত জানেন না তাঁদের এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে পড়েছে কি না।
উত্তর শহরতলিতে তবু কিছু বিধিনিষেধ চোখে পড়লেও দত্তপুকুর, গোলাবাড়ি, আমডাঙা, দেগঙ্গার কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে প্রথম দিনে লকডাউন অমান্য করার চিত্রই দেখা গেল অধিকাংশ জায়গায়। পুলিশ প্রশাসনের ব্যাখ্যা, আরও কিছু এলাকা ধাপে ধাপে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হবে। কিন্তু মঙ্গলবার নতুন করে কন্টেনমেন্ট জ়োন তৈরির বিষয়ে সরকারি ঘোষণা হওয়া সত্ত্বেও কেন শুক্রবারেও ওই সব গ্রামীণ এলাকাকে ব্যারিকেড করা গেল না, কোনও মহল থেকেই তার জবাব মেলেনি।
অবশ্য শহরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ব্যারিকেড করার কাজ সেরে ফেলেছিলেন পুলিশকর্মীরা ও স্থানীয়েরাই। ফলে নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসতের কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে কড়া নজরদারি ও দিনভর পুলিশের নাকা তল্লাশি চলল। সেই সঙ্গে পুলিশকে দেখা গেল কন্টেনমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করে দিতেও। বারাসত পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ সুনির্মল দাস ব্যারিকেডের সামনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে জানান, তাঁকে ওষুধ নিতে দোকানে যেতে হবে। তখন পুলিশকর্মীরাই ওষুধ কিনে বৃদ্ধের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অনিমেষ দত্তকে মুদিখানার জিনিসপত্রও পৌঁছল পুলিশই। অনিমেষবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউন শুরুর আগেই মাইকে ঘোষণা করে একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল। সেটিতে ফোন করে বাজারের কথা বলায় পুলিশ এসে বাড়িতে বাজার পৌঁছে দেয়।’’
অন্য একটি ঘটনায় বারাসতের টাকি রোড সংলগ্ন একটি আবাসনের এক বাসিন্দার গত সপ্তাহে করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। এ দিন তিনি ফের করোনা পরীক্ষা করিয়ে আবাসনে ঢুকতে গেলে সেখানকার অন্য বাসিন্দারা বাধা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আবাসনে পৌঁছে দেয়। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকেও সহায়তা করতে হবে। লকডাউন মেনে চলতে হবে, না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আর একটি ঘটনায় এ দিন বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে একটি নার্সিংহোমকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত না-করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। সেখানেও মানা হয়নি দূরত্ব-বিধি।