Coronavirus

আক্রান্তের খবরে সুনসান কাকদ্বীপও

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার কাকদ্বীপ ব্লকের প্রতাপাদিত্য পঞ্চায়েতের হালিশহর, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র পঞ্চায়েতের বামানগর ও শ্রীনগরের গোবিন্দপুর গ্রামের তিনজনের করোনা-রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

পথঘাট ফাঁকা। কাকদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

করোনা-আক্রান্তের খবর মেলার পরে অবশেষে নড়ে বসল কাকদ্বীপ। এত দিন ভিড় আটকাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল পুলিশ-প্রশাসনকে। সোমবার থেকে শহরের রাস্তাঘাট সুনসান তো বটেই, আতঙ্কে ঘরের জানলা-দরজাও বন্ধ রেখেছে বহু পরিবার।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার কাকদ্বীপ ব্লকের প্রতাপাদিত্য পঞ্চায়েতের হালিশহর, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র পঞ্চায়েতের বামানগর ও শ্রীনগরের গোবিন্দপুর গ্রামের তিনজনের করোনা-রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে ওই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। নজরদারি চালাতে ১০ জনের দল তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তাঁরা প্রতিদিন ৩০টি করে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। যে তিনটি গ্রামের সদস্যদের রিপোর্ট পজিটিভ, সেই তিনটি গ্রাম পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের কর্মীরা খাবার, ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন।

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরেও করোনা-আক্রান্ত মেলার খবরের পরেই সুনসান হয়ে গিয়েছিল বাজারহাট। ঠিক তেমনটাই দেখা যাচ্ছে কাকদ্বীপ শহর এবং লাগোয়া গ্রামগুলিতে। পাড়ার মোড়ে আড্ডা, বাজারের ভিড়, রাস্তার মোটরবাইক রেস— সবই বন্ধ। গ্রামের কেউ বাড়ির বাইরে বেরোলে প্রতিবেশীদের রোষের মুখে পড়ছেন। একই চিত্র কাকদ্বীপ শহর জুড়ে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর রটে যাওয়ার পর থেকেই সারা শহর প্রায় জনমানবশূন্য। লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু দোকান খুলছিল। সোমবার থেকে সেগুলিও বন্ধ।

Advertisement

প্রভাব পড়েছে কাকদ্বীপ হাসপাতালেও। সেখানে কয়েকটি ওয়ার্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। চিকিৎসক নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কিত। স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত তিনজনের সংস্পর্শে আসা ১১০ জনকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের লালারস পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। প্রতাপাদিত্য পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাদল মাইতি বলেন, ‘‘এই এলাকার যে বৃদ্ধা আক্রান্ত, তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন। মাঝে মধ্যে এখানে ওখানে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতেন। তিনি কী ভাবে আক্রান্ত হলেন, বোঝা যাচ্ছে না।’’ অন্য দুই পঞ্চায়েত এলাকার দুই বাসিন্দা কী ভাবে আক্রান্ত হলেন সে বিষয়েও বিশদে কিছু জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত।

অন্য দিকে, স্থানীয় করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তি অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন যে সব চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানো হল। আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার জানান, পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি বা তাঁর পরিজনদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁদের খোঁজ চলছে। থানা, হাসপাতাল, বাজার এবং আক্রান্তের এলাকা স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে এলাকায় রোজই নিত্যনতুন গুজব ছড়াচ্ছে। পুরপ্রধান জানান, আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা স্থিতিশীল। ফলে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পুলিশ ও পুরসভা থেকে এলাকায় প্রচার চলছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা পুলিশ কর্তারা অশোকনগরে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন।

এ দিকে, করোনা-আতঙ্কের মধ্যে স্থানীয় পিএল ক্যাম্প এলাকায় একের পর পর এক নিমগাছ মারা যাচ্ছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। যদিও প্রশাসন প্রচার করছে, এর সঙ্গে করোনার সম্পর্ক নেই। হাবড়ার পাটপট্টি কালীবাড়ি বাজার ও হাবড়ার মাছের পাইকারি বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অশোকনগর থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা এখানে আসতেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement