প্রশ্ন: ত্রাণ দিতে আসা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বিডিও। সুন্দরবনের দুর্গাদোয়ানি নদীতে। নিজস্ব চিত্র।
ত্রাণ বিলির নামে জলযানে সুন্দরবনে ভ্রমণে আসছেন কিছু মানুষ। বেশ কিছুদিন ধরেই এমন অভিযোগ উঠছে সুন্দরবনের নানা প্রান্তে। কোভিড পরিস্থিতিতে অকারণে এত মানুষের সমাগম রুখতে পদক্ষেপও শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবারই প্রায় দেড়শোজনের একটি দল ত্রাণ বিলি করতে আসে গোসাবায়। জলপথে মাইকিং করার সময় তা দেখতে পেয়ে ভুটভুটি দাঁড় করিয়ে সতর্ক করেন গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সুন্দরবনের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোসাবা ব্লকও। ইয়াস দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুর্গত মানুষদের শুকনো খাবার, জল, চাল, ডাল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তাঁরা। তবে অভিযোগ, এই ত্রাণ বিলির নামে অনেকেই লঞ্চ বা ভুটভুটিতে চেপে সুন্দরবন ভ্রমণ করছেন। সম্প্রতি সংবাদপত্রে তা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের তরফেও ঘাটে ঘাটে পরীক্ষার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে।
এ দিন দুর্গাদোয়ানি নদীতে সতর্কতামূলক মাইকিং করার সময় যাত্রীতে ঠাসাঠাসি একটি ভুটভুটি দেখে সেটিকে আটকান গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র। জানা যায়, ফলতার তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির খানের নেতৃত্বে প্রায় দেড়শো জন এসেছেন গাসাবায় ত্রাণ দিতে। তাঁদের দাবি, চারটি ভুটভুটিতে প্রায় চার হাজার জনের ত্রাণ নিয়ে এসেছেন তাঁরা। সাতটি জায়গায় ত্রাণ দেবেন। সেই কারণে লোকবল প্রয়োজন। তাই এত লোক নিয়ে এসেছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে একটি ভুটভুটিতে এত মানুষ উঠেছেন কেন সেই প্রশ্ন করেন বিডিও। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বিপদ হতে পারে বলে তাঁদের সতর্কও করেন তিনি। অন্য ভুটভুটিতে ভাগাভাগি করে যাতায়াত করার কথাও বলেন। বিডিও বলেন, “এত মানুষ একসঙ্গে একটি ভুটভুটিতে উঠলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ হতে পারে। তার উপর করোনা পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখতে হবে। সেই কারণে ওদের সতর্ক করা হল।” জাহাঙ্গির বলেন, “এই এলাকার মানুষ কষ্টে আছেন। তাই আমরা এঁদের সাহায্য করতে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছি। আসলে এতোগুলো মানুষকে সাহায্য দিতে হবে বলেই এতজনকে আনতে হয়েছে।”
ত্রাণ দিতে এত মানুষের একসঙ্গে আসা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রশাসনের একাংশ। সম্প্রতি সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে ত্রাণ দিতে আসা এক-একটি দলে পাঁচজনের বেশি যাতে না থাকেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে। এ দিন মন্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গোসাবার বিডিও অবশ্য জানান, এরকম কোনও নির্দোশিকা এখনও আসেনি। তবে প্রশাসনের তরফে লোক সমাগম আটকাতে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।