Train accident

আলো দেখতে পেয়ে বুঝলাম, এখনও তা হলে বেঁচে আছি

ধীরে ধীরে দেখলাম, সব শান্ত হয়ে গেল। আশপাশে সকলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, কোথা থেকে যেন একটা আলো দেখতে পাচ্ছি।

Advertisement

সেবিকা মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১০:৩৬
Share:

সেবিকা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ভাসুর মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা বেঙ্গালুরু থেকে মালদহ ফিরছিলাম। আমরা মানে, আমি আর আমার স্বামী (পরিতোষ মণ্ডল)। আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালাতে হাত দু’টোই ভরসা।

Advertisement

বেঙ্গালুরুতে আমরা ফুল ও ফলের বাগান পরিচর্যার কাজ করি। রিজার্ভেশন না পেয়ে, সাধারণ অসংরক্ষিত কামরার শৌচাগারের দরজার সামনে স্বামীর সঙ্গে কোনও রকমে বসেছিলাম। ট্রেন ঠিকঠাকই চলছিল। তখন শুক্রবার সন্ধে। হঠাৎ আমাদের ট্রেনে প্রবল ঝাঁকুনি। সঙ্গে বিকট শব্দ। তারপর আচমকা চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হল আমাদের কামরাটা বোধহয় ভেঙে কোথাও উঠে যাচ্ছে। বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। যেন সব শেষ! দেখলাম, আমাদের কামরার সকলে একে অপরের উপরে যেন উড়ে এসে পড়ছে। যাত্রীদের জিনিসপত্রও সব এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে কতটা সময় কাটল বুঝতে পারিনি। এক একটা মুহূর্তকে, এতটা দীর্ঘ আর কোনও দিন মনে হয়নি।

ধীরে ধীরে দেখলাম, সব শান্ত হয়ে গেল। আশপাশে সকলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, কোথা থেকে যেন একটা আলো দেখতে পাচ্ছি। বুঝলাম এখনও বেঁচে আছি! পাশে খুঁজে পেলাম পরিতোষকেও। ও বলল, পা’টা ধরে থাকতে। ওর কথা শুনে, কোনও ক্রমে উল্টে যাওয়া থেকে কামরা থেকে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম, আমার সারা শরীর রক্তে ভিজে। সকলে মিলে আমাকে আর ওকে (পরিতোষ) হাসপাতালে নিয়ে গেল।

Advertisement

আমরা মালদহের বলরামপুরের বাসিন্দা। আমাদের ৮ আর ৬ বছরের দু’টো বাচ্চা আছে। ওদের রেখেই কাজের খোঁজে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছিলাম। এক মাসও হয়নি ছুটি কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। তারপর ভাসুরের মৃত্যুর খবর পেয়ে আবার বাড়ি ফিরছিলাম। শুনছি বহু মানুষ মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। ভাগ্যিস, আমাদের কিছু হয়নি। তা হলে বাচ্চা দু’টো ভেসে যেত!

লেখক যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement