পাশাপাশি গরু এবং মানুষের খাবারের বন্দোবস্ত। —নিজস্ব চিত্র।
চালাবাড়ির এক পাশে খড় খাচ্ছে গরু। মশা-মাছি ভনভন করছে। খুঁটিতে বাঁধা আছে বাছুরও। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই চালাঘরের অন্য পাশে চলছে প্রায় ১০০ জনের রান্নার আয়োজন। সেই খাবার আবার দেওয়া হবে শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের। এমন ভাবেই চলছে উত্তর ২৪ পরগনার পিফা পঞ্চায়েতের ২০৮ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার বলেও লাভ হয়নি। অন্য দিকে, স্থানীয় বিধায়ক জানেনই না যে এ ভাবেই দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য খাবার তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং শিশু-সহ মোট ৮২ জনের খাবার তৈরি হয়। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব কোনও ঘর নেই। তাই গোয়ালঘরটির এক দিক ভাড়া নিয়ে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। যার ফলে গরুদের খাবারের জায়গা এবং মা ও শিশুদের খাবার তৈরি হয় পাশাপাশি। গরুর গায়ে মাছি বসছে, সেই মাছি উড়ে এসে বসছে খাবারের উপরে। গবাদি পশু মলমূত্র ত্যাগ করছে। তার কাছেই রান্না করার জলের বালতি। এবং সেই বালতির উপরে কোনও ঢাকনা নেই।
এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক আকবর গাজি বলেন, ‘‘খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাচ্চা এবং অন্তঃসত্ত্বাদের খাবার তৈরি হয় এখানে। যে কোনও দিন খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে সবাই। আমরা অনেক বার এ নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ির দিদিমণিদের কাছে দরবার করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’
অন্য দিকে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ‘দিদিমণি’ মাসুমা খাতুন জানাচ্ছেন, তাঁদের কিছু করার নেই। কারণ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি নেই। যেখানে রান্না হয়, সেখানে গোয়ালঘরের মাঝামাঝি একটি অংশ ঘেরা ছিল। কিন্তু সেটিও ভেঙে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘একটা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের হাতে আর কতটুকু থাকে!’’ এই দুরবস্থা নিয়ে পিফা পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা কাদের সর্দারের অভিযোগ, শুধু ২০৮ নম্বর নয়, ওই পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অবস্থা মোটামুটি এক। তিনি বলেন, ‘‘২০৮ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র যে ভাবে চলছে, তাতে যে কোনও দিন শিশু এবং হবু মায়েরা অসুস্থ হবেন এবং হচ্ছেনও। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে শিক্ষা দফতর, সবাই উদাসীন।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং উপপ্রধান আবার এ নিয়ে কিছুই বলতে চাননি। বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পরিস্থিতির কথা শোনার পরে বলেন, ‘‘আমি তো জানতাম না! আমি খোঁজ নেব। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’