ভাঙচুরের পর। ছবি: সামসুল হুদা
ভাঙড়ে তৃণমূলের সঙ্গে আকচাআকচি বেড়েই চলেছে আব্বাস সিদ্দিকী অনুগামীদের। এ বার শাসক দলের কার্যালয়ে ঢুকে মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর অনুগামী তথা আহলে সুন্নাতুল জামাতের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চার তৃণমূল কর্মী জখম হন। কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিওগ্রাফি করতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আলামত মোল্লা নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারেরও মাথা ফেটেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় থানার বোদরার নিমতলায়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দলীয় কর্মীদের মারধর এবং কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে বিধায়ক শওকত মোল্লার নেতৃত্বে নিমতলা থেকে শাঁকশহর বাজার পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় বোদরা বাসস্ট্যান্ডের কাছে তৃণমূলের কর্মী-বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে দলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক নিমতলায় দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। অভিযোগ, সে সময়ে আহলে সুন্নাতুল জামাতের কর্মী-সমর্থকেরা বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে ওই কার্যালয়ে চড়াও হয়। ভাঙচুর চালাতে থাকে তারা। তৃণমূল কর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ইলিয়াস মোল্লা নামে একজনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাঙড় থানার পুলিশই সকলকে উদ্ধার করে। তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।
রাতেই ঘটনাস্থলে যান বিধায়ক শওকত মোল্লা। বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। রাজনৈতিক ভাবে আমরা এর মোকাবিলা করব। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বধন নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
বিধানসভা ভোটে আব্বাস সিদ্দিকীরা কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়ার তোড়জোড় করছেন। ইতিমধ্যে ভাঙড় ও ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকায় সংগঠন মজবুত করতে জনসভা করছেন। বুধবার তিনি ভাঙড়ের চাঁদপুরে সভা করেন। ওই সভায় আহলে সুন্নাতুল জামাতের কর্মীদের আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সময় থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত। দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় গোলমাল ছড়ায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করেন আব্বাস অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার নতুন করে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের উপরে।
ভাঙড় ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা বলেন, ‘‘ওরা বিধানসভা ভোটে সিপিএম-বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা করে দিতে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের বিভাজন চাইছে। এলাকা অশান্ত করতে আমাদের দলীয় কর্মীদের উপরে আক্রমণ করছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আহলে সুন্নাতুল জামাতের ভাঙড় ১ ব্লকের সভাপতি শরিফুল মোল্লা বলেন, ‘‘ওরা বুঝে গিয়েছে, মানুষ ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সে কারণেই চক্রান্ত করে আমাদের ফাঁসাতে চাইছে। ওরা নিজেরাই নিজেদের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আমাদের বদনাম করতে চাইছে। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’