আক্রান্ত: ভাঙড়ের নিমতলায় ভাঙচুর তৃণমূলের কার্যালয়ে। ফাইল চিত্র।
একট সময় ছিল, যখন পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়ের মাটি। জমি কমিটির সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে সে সময়ে রীতিমতো ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়েছিল তৃণমূলের। দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী মারামারিও কম হয়নি। পরে পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতে কয়েকটি আসনে জয়ীও হয় জমি কমিটি।
জমি আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতি এখন শান্ত। এ বার আবার আহলে সুন্নাতুল জামাতের সঙ্গে বার বার মারপিটে জড়িয়ে পড়ছে শাসক দল। বহু জায়গায় তারাই আক্রান্ত বলে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল শিবির। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বার বার নাম জড়াচ্ছে ভাঙড়ের।
২০২১ বিধানসভা ভোটে ইতিমধ্যেই তারা রাজ্যের ৪৪টি আসনে লড়বে বলে জানিয়েছে ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আহলে সুন্নাতুল জামাত। মিটিং-মিছিলও শুরু করেছে তারা। ভাঙড়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক জমি খুঁজে পেতে মরিয়া তারা। আর সে কারণেই বার বার শাসক দলের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। গত দু’মাস ধরে শাঁকশহর, পদ্মপুকুর, বোদরা, চাঁদপুর, দুর্গাপুর, হরিহরপুর ও নিমতলায় একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে দু’পক্ষের। রাস্তা অবরোধ হয়েছে। এমনকী, নিমতলায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর, মারধরের অভিযোগও উঠেছে সিদ্দিকী অনুগামীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তৃণমূলের একটি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজনই ইদানীং সিদ্দিকী ঘনিষ্ঠ শিবিরে ভিড় বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেসের লোকজনও এই শিবিরে যোগ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ক্রমশ এক সময়ে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি ভাঙড়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে বিরোধীরা। ভাঙড় ১ ব্লক এলাকায় আহলে সুন্নাতুল জামাতের হয়ে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় একদা সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য শরিফুল মোল্লাকে। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে সিপিএমে থেকে মানুষের জন্য কোনও কাজ করা যাচ্ছিল না। সরকারি প্রকল্পের ঘর থেকে শুরু করে আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা— সব কিছুতেই শাসকদল গরিব মানুষের থেকে কাটমানি নিয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। সে কারণে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আসতে সাহায্য করছে তৃণমূল। ওদের অত্যাচারে মানুষ খড়কুটোর মতো যাকে সামনে পাচ্ছে, তাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে।’’ কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জয়ন্ত দাসের কথায়, ‘‘আমরা ধর্মীয় মেরুকরণে বিশ্বাসী নই। কংগ্রেস একটি সর্বভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ দল। কংগ্রেস ভেঙে অনেক রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ ওই দিকে (আব্বাস-শিবির) গিয়ে থাকতে পারেন। তার মানে এই নয়, আমরা তাদের সমর্থন করছি।’’ আব্বাস সিদ্দিকীর অনুগামীদের ক্রমবর্ধমান দৃশ্যমানতা নিয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য অভিজিৎ দাসের (ববি) ব্যাখ্যা, ‘‘আসলে আব্বাস সিদ্দিকী তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ করে তৃণমূলকেই রাজনৈতিক সুবিধা করে দিচ্ছে। পক্ষান্তরে শাসক দল তাকে মদত দিচ্ছে। তিনি (আব্বাস) রাজনৈতিক দরকষাকষি করে নিজের পকেট ভরতে চাইছেন।’’ নিজেদের ‘গড়ে’ আব্বাস অনুগামীদের হাতে একাধিকবার আক্রান্ত হয়ে কী বলছে ঘাসফুল শিবির? বিধায়ক তথা জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘ওরা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ চাইছে। সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে আদতে ওরা বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা করে দিচ্ছে। সিপিএম, কংগ্রেসও মদত দিচ্ছে। উনি (আব্বাস সিদ্দিকী) ধর্মীয় জার্সি খুলে রাজনীতির ময়দানে নামুন। আমরা মোকাবিলা করব।’’ আব্বাস অনুগামীদের রাজনৈতিক উত্থান তৃণমূল না বিজেপি— কার হাত শক্ত করে, তা আগামী দিনে বোঝা যাবে। তবে আপাতত ভাঙড়ের জমিতে শাসক দলকে যে ভাবে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আব্বাস-শিবির, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।